লিটনের নেতৃত্বে এশিয়া কাপ জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু?

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, ছবি:সংগৃহীত
শুরুতেই বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর কথা দিয়ে শুরু করা যাক। আসন্ন এশিয়া কাপ নিয়ে তিনি বলেছিলেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে তবে দলের স্ট্রেন্থ সম্পর্কেও ধারণা থাকা প্রয়োজন। এতে ধরে নেওয়া যায় টাইগারদের সম্ভাবনা কতটুকু।
লিটন-মুস্তাফিজদের নিয়ে সমর্থকদের প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী। তাইতো প্রতি টুর্নামেন্ট শেষ একবুক হতাশা আর আক্ষেপ নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে হয় নতুন আরেকটি টুর্নামেন্টের। সামনেই এশিয়া কাপ। দলে নেই অভিজ্ঞ কোন ক্রিকেটার। তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে এশিয়া কাপে প্রত্যাশার চাপ কতটুকু মেটাবে ক্রিকেটাররা সেটি এখন বিরাট প্রশ্ন। তবে এবার যেহেতু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপ সমর্থকরা একটু আশা দেখতেই পারেন। কারণ টি-টোয়েন্টি'তো তরুণদের খেলা।
ইতিমধ্যে লিটন দাসের নেতৃত্বে ঘোষণা করা হয়েছে ১৬ সদস্যের স্কোয়াড। দীর্ঘদিন পর দলে ফিরেছেন নরুল হাসান সোহান এবং সাইফ হাসান। দুইজনই বিভিন্ন টুর্নামেন্টে দেখিয়েছেন তাদের চমক। যদিও লিটন এবং জাকের হোসেন দলে নিয়মিত হওয়ার পরেও সোহান অন্তর্ভুক্তি কেনো তা বোধগম্য নয় ক্রিকেট বোদ্ধাদের। সব মিলিয়ে ১৬ সদস্যের স্কোয়াড দেখে অনুমান করা যায় টি-টোয়েন্টির জন্য এই মূহুর্তে টাইগারদের এটিই আদর্শ দল। তরুণ এই দলে আছে প্রতিভা, আছে অভিজ্ঞতা, তবে সীমাবদ্ধতাও কম নয়।
প্রথমেই বলতে হয় পেস বোলিং আক্রমণের কথা। মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও তরুণ তানজিম হাসান শাকিব এই চারজন মিলে গড়া ফাস্ট বোলিং ইউনিট এশিয়ার যে কোনো দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ হতে পারে। মাঝেমধ্যে মুস্তাফিজ তার পারফরম্যান্স দিয়ে ঝলক দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশ দলে মুস্তাফিজ এখনো অপরিহার্য। অভিজ্ঞ মুস্তাফিজের সঙ্গে শরিফুল ও তাসকিনের গতি-বাউন্স যোগ করবে নতুন মাত্রা।
স্পিন বিভাগেও বাংলাদেশ মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ। নাসুম আহমেদ ও রিশাদ হোসেন আছেন টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট হিসেবে। রিশাদের লেগস্পিন ম্যাচে হতে পারে টার্নিং মোমেন্ট। তার ভালো একটি ওভার বদলে দিতে পারে ম্যাচের পরিস্থিতি। পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে শেখ মাহেদি দলের একমাত্র ভরষা। অপশনাল স্পিনার হিসেবে থাকবেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী। বোলিং বিভাগে বর্তমানে বিশ্বের যে কোন দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে পারবে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা।
ব্যাটিংয়ে শুরুতেই তানজিম হাসান তামিম এবং পারভেজ হোসেন ইমন। দুজনেই রয়েছে দারুণ ছন্দে। ধারাবাহিক ক্রিকেট আর আদর্শ স্ট্রাইকরেট বজায় রাখলে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। কারণ জনপ্রিয় এই ফরম্যাটের প্রথম ছয় ওভার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মিডল অর্ডারে লিটন-হৃদয় জুটি। গত দুই বছর ধরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক রান সংগ্রাহক। তবে ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে ঝুঁকি নিতে এই দুই ব্যাটারকে। বিশেষ করে নজর দিতে হবে স্ট্রাইকরেটে। শেষ দিকে আছেন পাওয়ার হিটার শামীম এবং জাকের হোসেন। নতুন ব্যাটিং কোচ জুলিয়ান উডের কাছে যারা ডেঞ্জারাস।
ব্যাটিং বোলিংয়ের জায়গায় বেশ ভারসাম্যেপূর্ণ মনে হলেও উদ্বেগের জায়গাও কম নয়। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বড় টুর্নামেন্টে চাপের মুখে ভেঙে পড়ার যে প্রবণতা সেটি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। চাপ সামলে সাবলীল ক্রিকেট উপহার দিতে পারলেই এগিয়ে থাকবে টাইগারর।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই দল যদি সঠিক কম্বিনেশন বের করতে পারে এবং ব্যাটিংয়ে অন্তত দুজন ব্যাটার ধারাবাহিকভাবে রান করেন, তবে বাংলাদেশকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। পেস আক্রমণ ও স্পিনের বৈচিত্র্যই দলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
এশিয়া কাপ ২০২৫ বাংলাদেশের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এখানে ভালো করলে কেবল আত্মবিশ্বাসই বাড়বে না, আসন্ন বিশ্বকাপের প্রস্তুতিও মজবুত হবে। সমর্থকরা তাই আশা করছেন লিটন দাসের নেতৃত্বে নতুন চেহারার বাংলাদেশ দল এশিয়া কাপে চমক দেখাবে।