সীমান্ত রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের প্রতারণা: অনুমোদনহীন সীমান্ত সিটি ও সীমান্ত কান্ট্রি প্রকল্প

সীমান্ত কান্ট্রি সিটি—কেবল বাঁশের ব্যানার, অনুমোদন নেই; গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ফাঁদ।
বাংলাদেশের আবাসন খাতে আবারও বড় ধরনের প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সীমান্ত রিয়েল এস্টেট লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি সীমান্ত সিটি ও সীমান্ত কান্ট্রি নামে দুটি প্রকল্পের অনুমোদন ছাড়াই জমি বিক্রি ও বিপণন কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
সীমান্ত সিটি: জমি না কিনেই মালিকানা দাবি
সীমান্ত সিটি নামে পরিচিত প্রকল্পটি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের আতলাপুর গ্রামে অবস্থিত বলে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পের আওতায় তাওড়া, ভোলাব, বনবাগ ও কেন্দুয়া মৌজার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে জমি না কিনেই ভোরে বাঁশ পুঁতে সাইনবোর্ড বসিয়ে মালিকানা দাবি করছে কোম্পানিটি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে তারা।
একজন ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক বলেন, তাদের জমিতে অনুমতি ছাড়া সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে অথচ কোম্পানিটি এক শতাংশ জমিও ক্রয় করেনি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধির অভিযোগ
ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন জানান, সীমান্ত রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের কোনো প্রকল্প ইউনিয়ন পরিষদ অনুমোদন দেয়নি। তারা অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
সীমান্ত কান্ট্রি: একই কৌশল
অন্যদিকে সীমান্ত কান্ট্রি নামে আরেকটি প্রকল্প দাউদপুর ইউনিয়নের বাগলা গ্রামে চালু করার চেষ্টা চলছে। বংশিদা, রোহিলা, বড় আমদিয়া ও বাগপাড়া মৌজার নাম উল্লেখ করে একই কৌশলে বাঁশ পুঁতে সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে এবং ফেসবুকে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে।
দাউদপুর ইউনিয়নের সচিব শামীম মিয়া বলেন, সীমান্ত রিয়েল এস্টেট বা সীমান্ত কান্ট্রি প্রকল্পের জন্য কোনো অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া হয়নি, এমনকি তারা কোনো আবেদনও করেনি।
প্রশাসনের সতর্কবার্তা
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (ভূমি অধিগ্রহণ শাখা-ক অঞ্চল) মৌসুমী আক্তার জানান, সীমান্ত রিয়েল এস্টেটকে জমি অধিগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমতি ছাড়া জমি বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কিংবা জেলা প্রশাসন থেকে সীমান্ত রিয়েল এস্টেট কোনো অনুমোদন পায়নি। আইন ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজউকের কড়া অবস্থান
রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অনুমোদনহীনভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বিপণন বা বিক্রয় কার্যক্রম চালাতে পারে না। সীমান্ত রিয়েল এস্টেটের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি সাধারণ ক্রেতাদের জমি কেনার আগে অবশ্যই অনুমোদন যাচাই করার আহ্বান জানান।
পরিবেশের জন্য হুমকি
পরিবেশবিদ ড. আকলিমা পারভীন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমিতে অনুমোদনহীন প্রকল্প পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এ ধরনের প্রতারণা বন্ধে প্রশাসনকে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দ্বিধাদ্বন্দ্বপূর্ণ বক্তব্য
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহাব্বত খান অনুমোদন সংক্রান্ত প্রশ্নে প্রথমে বলেন, আমরা এখনো বিক্রি শুরু করি নি। তবে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনারা প্রতিনিয়ত প্রকল্প ভিজিট করাচ্ছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, তখন তিনি উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপর বারবার ফোন করা হলেও তিনি আর কল রিসিভ করেননি।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুমোদন ছাড়া পরিচালিত প্রকল্পে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। সীমান্ত রিয়েল এস্টেটসহ ভুয়া প্রকল্প দ্রুত শনাক্ত করে বন্ধ করা জরুরি, নইলে অনেক ক্রেতা সর্বস্বান্ত হবেন।