Site Logo | মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ব্রেকিং নিউজ

ফেসবুকে আমেরিকার বিরুদ্ধে কিছু বললেই পাবেন না ভিসা

ফেসবুকে আমেরিকার বিরুদ্ধে কিছু বললেই পাবেন না ভিসা

স্ট্যাচু অব লিবার্টি। ছবি: সংগৃহীত

Advertisement

বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের কাছে আমেরিকা যেন একটি স্বপ্নের নাম। উন্নত জীবনযাপন, উচ্চশিক্ষা কিংবা কর্মসংস্থানের আশায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এখন থেকে সেই স্বপ্নপূরণের পথ আরও কঠিন হয়ে গেল।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বুধবার জানিয়েছে, নতুন নীতিমালায় অভিবাসন কর্মকর্তারা যদি মনে করেন কোনো আবেদনকারী ‘আমেরিকাবিরোধী’, তাহলে তার ভিসা আবেদন সরাসরি বাতিল হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও থাকবে নজরদারিতে

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা সংস্থা (USCIS) হালনাগাদ নীতিমালায় জানিয়েছে, আবেদনকারীর কর্মকাণ্ড খুঁটিয়ে দেখা হবে। শুধু কর্মজীবন বা শিক্ষাজীবনের তথ্য নয়, বরং তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া মতামতও বিবেচনায় নেওয়া হবে। বিশেষ করে- আমেরিকা-বিরোধী বক্তব্য, ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাব বা কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, এসব প্রমাণ পাওয়া গেলে ভিসা দেওয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, এর আগেই ট্রাম্প প্রশাসন ভিসা প্রক্রিয়ায় সামাজিক মাধ্যম যাচাই বাধ্যতামূলক করে। এবার তারই সম্প্রসারিত রূপে যুক্ত হলো নতুন শর্ত—“আমেরিকা-বিরোধী কার্যকলাপ বা মনোভাব”।

‘আমেরিকাবিরোধীর’ সংজ্ঞা নিয়ে বিভ্রান্তি

নতুন নীতিমালায় ‘আমেরিকাবিরোধী’ শব্দটির সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। শুধু বলা হয়েছে- যারা ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসে জড়িত, সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বা এ ধরনের মূল্যবোধ ধারণ করেন, তারাই এই তালিকায় পড়বেন।

Advertisement

তবে ১৯৫২ সালের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনে (আইএনএ) এর কিছু ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সদস্যরা, যারা বিশ্বব্যাপী সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রচার করেন, সুসংহত সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন কিংবা সহিংস উপায়ে মার্কিন সরকার উৎখাত করতে চান তাদের ‘আমেরিকাবিরোধী’ হিসেবে গণ্য করা হবে।

এই অস্পষ্ট সংজ্ঞা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, “গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নেওয়া কি তবে আমেরিকা-বিরোধিতা?’ আবার অনেকে আশঙ্কা করছেন- প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে সমালোচনা বা কার্টুন শেয়ার করাও কি এই তালিকায় পড়বে?

আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীরা বলছেন, নতুন এই উদ্যোগে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এতে কর্মকর্তারা একপাক্ষিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, আর ভিসাপ্রত্যাশীদের জন্য প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যাবে যে তারা আমেরিকাবিরোধী নন।

মার্কিন অভিবাসন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ ফেলো অ্যারন রেইখলিন-মেলনিক এই উদ্যোগকে তুলনা করেছেন ১৯৫০-এর দশকের ম্যাককার্থিইজম-এর সঙ্গে, যখন সমাজতন্ত্রের অভিযোগে বহু মানুষ নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন।

হিউস্টনের অভিবাসন আইনজীবী স্টিভেন ব্রাউন বলেন, “আমেরিকান মূল্যবোধের সংজ্ঞা যে যেমন খুশি ব্যবহার করতে পারে। অভিবাসন আইনে এর নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই।”

ব্রিগহ্যাম ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী লিলি লোপেজ আরও স্পষ্ট করে বলেন, “এই নীতি কর্মকর্তাদের জন্য এমন এক দরজা খুলে দিচ্ছে, যেখানে তারা নিজেদের পক্ষপাত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

কঠোর ভিসা নীতি, বাতিল হচ্ছে হাজারো আবেদন

Advertisement

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছরই ছয় হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করা হয়েছে। জুন মাসে দপ্তরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছিল- কেউ যদি মার্কিন নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার বা সংস্থার প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখায়, তার ভিসা আবেদন সরাসরি বাতিল করতে হবে।

ইউএসসিআইএস মুখপাত্র ম্যাথু ট্রাগেসার বলেন, “যারা আমেরিকাকে ঘৃণা করে এবং আমেরিকাবিরোধী মূল্যবোধ প্রচার করে, তাদের আমরা কখনোই আমেরিকার সুফল ভোগ করতে দেব না।”

Advertisement
Advertisement
Advertisement
Loading...
×