Site Logo | সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ব্রেকিং নিউজ

স্থানীয়দের সঙ্গে চবি শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

স্থানীয়দের সঙ্গে চবি শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

আহতদের কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে

Advertisement

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নারী শিক্ষার্থীকে দারোয়ান কর্তৃক মারধরের ঘটনা কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটসংলগ্ন এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

আহতরা হলেন আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শাওন, ইতিহাস বিভাগের তাহসান হাবিব, লোকপ্রশাসন বিভাগের আশরাফুল ইসলাম রাতুল, গণিত বিভাগের লাবিব, ইংরেজি বিভাগের হাসান জুবায়ের হিমেল, অর্থনীতি বিভাগের নাহিন মুস্তফা, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আল-মাসনুন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আশিকুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের মাইনুল ইসলাম মাহিন, সমাজতত্ত্ব বিভাগের হুমায়ুন কবির, দর্শন বিভাগের তামিম, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের রিদুয়ান, অ্যাকাউন্ট বিভাগের রিফাত ও রিপন, বাংলা বিভাগের সাইদুল ইসলাম ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মো. ইয়েনসহ অনেকে।

Advertisement

চবি মেডিক্যাল সেন্টারের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোহাম্মদ টিপু সুলতান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ২ নম্বর গেটের কাছে শাহাবুদ্দীন ভবন নামের একটি বাসায় বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের নারী শিক্ষার্থীকে দারোয়ান কর্তৃক মারধরের মাধ্যমে ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরবর্তী সময়ে এ ঘটনার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসে ২ নম্বর গেটের দিকে।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই মেয়ে শিক্ষার্থী রাত করে আসায় বাসার দরজা খুলতে অপারগতা জানান দারোয়ান। পরে ওই বাসার আরও কিছু মেয়ে শিক্ষার্থী এসে দরজা খোলার জন্য জোর করে। পরে গেট খোলার পর ওই দারোয়ান ও মেয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে ওই মেয়ে শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তুলে দারোয়ান।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, আমি রাত ১১টা ২০ মিনিটে বাসায় আসি, তখন গেট লাগানো ছিল। এমনিতে রাত ১২টা পর্যন্ত বাসায় ঢোকা যায়। আমি অনেকক্ষণ ধরে ডাকছিলাম গেট খোলার জন্য কিন্তু দারোয়ান গেট খুলছিলেন না। একপর্যায়ে যখন আমার রুমমেটরা দরজা খুলতে তাকে বাধ্য করল তখন তিনি আমার ওপর চড়াও হন। আমাকে মারধর করেন আমার গায়ে হাত তোলেন। ঘাড়ে চড় মারেন।

Advertisement

স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান বলেন, স্থানীয়রা আমার বুকের ওপরে লাথি মারে। আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না। আমার ভাইদের ওরা (স্থানীয়) ইচ্ছামতো পিটাইছে। লাঠি দিয়ে পিটাইছে, অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রক্টরদের গাড়ি এখানে উপস্থিত হওয়ার পর আমরা এগিয়ে আসি। কিন্তু এ সময় মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা আসে ‘জোবরাবাসী এক হও, বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালিয়েছে’। এ সময় বাছামিয়ার দোকানের ওখানে প্রাইমারি স্কুলের পাশ থেকে আমাদের ওপর আক্রমণ করা শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা আলাদা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা নিজেরাও জোবরার মানুষ। তারা আহত শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্যও এগিয়ে আসেনি।

সংঘর্ষে আহত অর্থনীতি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, কিছু লোকের জন্য আজকে আমাদেরকে মার খেতে হয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছে আমার ভাইয়েরা। আমি বারবার তাদেরকে বলছিলাম রাতে ওইদিকে যাওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু তারা (বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী) কথাগুলো শুনল না। রাতের অন্ধকারে স্থানীয়রা আমাদের মেরে রক্তাক্ত করল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আজকে যেই ঘটনাটা আমাদের সঙ্গে ঘটল, এ ঘটনার পুরো দায় প্রশাসনের। এ ঘটনার আগেও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা জোবরার স্থানীয়দের হাতে রক্তাক্ত হয়েছে। কিন্তু কখনোই এদের শাস্তির আওতায় আনা হয় নাই। যার ফলে বারবার আমাদের এই স্থানীয়দের হাতে মার খেয়ে আসতে হচ্ছে। আগের প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা কোনোরকম আশানুরূপ ফলাফল পাইনি। কিন্তু এখন তো জুলাইয়ের প্রশাসন। এখনও যদি এই স্থানীয়দের নিয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হয় তাহলে ধিক্কার এ প্রশাসনকেও।

সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, মেডিক্যালে রাত দেড়টার পর থেকে আহত শিক্ষার্থীরা আসতে থাকেন। যেহেতু রেগুলারলি রাতে একজন ডাক্তারই থাকেন সেহেতু এ রকম ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনেও আমাকে একাই প্রায় ৬০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে সামাল দিতে হয়েছে। আমার সঙ্গে আরেকজন সহযোগী ও কর্মচারীরা সহযোগিতা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, তবে এ রকম ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে হ্যান্ডেল করার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ লোকবল ও সরঞ্জাম কিছুই ছিল না। এমনকি বেশকিছু শিক্ষার্থীকে আমরা ঠিকমতো অক্সিজেনও দিতে পারিনি। ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাই আহত শিক্ষার্থীদের আমরা চমেকে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর গুরুতর আহত হয়েছেন ৫-৭ জনের মতো। মাথা ফেটেছে কয়েকজনের।

Advertisement
Advertisement
Advertisement
Loading...
×