কাশিমপুর কারাগারে বন্দীদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ বন্দীদের উপর বর্বর নির্যাতনের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্য ও অধিকারকর্মীরা। বন্দী মাহমুদ আজহারের ছেলে নাসরুল্লাহ এবং কারামুক্তি আন্দোলনের নেতারা বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বন্দীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারাবন্দি মাহমুদ আজহারের ছেলে নাসরুল্লাহ বলেন, চলতি বছরের ৯ জুলাই সকাল ৫:৩০–৬:০০ টার মধ্যে কারাগারের ৩০ নং সেলে বন্দী থাকা মাহমুদ আজহারকে মোবাইল ফোন পাওয়ার অজুহাতে কেস টেবিলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাদের চোখ বেঁধে, পেছনে হাতে হাতকড়া পরানো হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন কারারক্ষী। তারা অভিযোগ করেন, কারারক্ষীদের নির্দেশে তাকে মোটা লাঠি দিয়ে পেটানো হয়, বুকের ওপর উঠে দাঁড়ানো হয় এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এসময় আসাদুল্লাহ ও মিন্টু প্রধানসহ আরো কয়েকজন বন্দীকেও নির্যাতন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলনে, ‘জেল কোড অনুযায়ী ফোন পাওয়ার শাস্তি নির্ধারিত আছে, আর তা হলো সর্বোচ্চ তিন মাস পায়ে বেড়ি। কিন্তু বন্দীদের ওপর এ ধরনের অমানবিক নির্যাতনের কোনো বিধান নেই। উপরন্তু, শুধু মাহমুদ আজহারের কাছে ফোন পাওয়া গেছে, অন্যদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই—তবুও তাদেরকে বিনা কারণে নির্যাতন করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, ’এ অভিযান একটি ধারাবাহিক বৈষম্যমূলক ও পরিকল্পিত নির্যাতন, যা শুধুমাত্র ইসলামপন্থী বন্দীদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের বর্তমান কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের বন্দীদের সঙ্গে বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকলেও, ইসলামপন্থিদের ওপর নিয়মিত ও অযৌক্তিক অত্যাচার চালাচ্ছেন।’
কারামুক্তি আন্দোলনের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম এবং মাওলানা আলতাফ হোসেন, আল আমিন সাকি, ইসমাইল খলীল অভিযোগ করেছেন, এই ধরনের আচরণ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দেশের জেল আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির পরিপন্থি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তারা সরকারি কর্তৃপক্ষকে কারাগারের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ, অবৈধ নির্যাতন বন্ধ ও শাস্তির দাবি জানান।
নাসরুল্লাহ বলেন, আমরা চাই এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক। ফ্যাসিস্ট জেলা কর্মকর্তার অপসারণ এবং অভিযুক্তদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
এ ঘটনায় সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, কারাগারে বন্দীদের নিরাপত্তা ও মানবিক মর্যাদা সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।