Site Logo | সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ব্রেকিং নিউজ

কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের জন্মদিন আজ

কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের জন্মদিন আজ

বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি জহির রায়হান।

Advertisement

বাংলাদেশের সাহিত্য ও চলচ্চিত্র জগতের অমর নাম জহির রায়হান। আজ তাঁর জন্মদিন। মাত্র ছত্রিশ বছরের জীবনে তিনি যে অসাধারণ সাহিত্যকর্ম ও চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে গেছেন, তা আজও নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা।


শৈশব ও শিক্ষাজীবন

Advertisement

১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনীর মাজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জহির রায়হান। তাঁর পিতা কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। সেই সুবাদে শৈশব কেটেছে কলকাতায়। জন্মনাম ছিল আবু আবদাল মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ, ডাকনাম জাফর। ১৯৪০ সালে কলকাতা মডেল স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার শুরু করেন। দেশভাগের পর পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন। স্থানীয় আমিরাবাদ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তবে সাহিত্য, রাজনীতি ও সমাজচেতনার টানে খুব দ্রুত সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতিচর্চায় যুক্ত হন।


সাংবাদিকতা থেকে চলচ্চিত্রে

১৯৫০ সালে সাপ্তাহিক যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর প্রবাহ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তবে ছোটবেলা থেকেই সিনেমার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। ১৯৫৭ সালে উর্দু ছবি জাগো হুয়া সাভেরায় সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন।

Advertisement

১৯৬১ সালে কখনো আসেনি চলচ্চিত্র দিয়ে পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ। এরপর ১৯৬৪ সালে নির্মাণ করেন বাংলাদেশের প্রথম রঙিন ছবি সংগম। একইসঙ্গে নির্মাণ করেন দেশের প্রথম ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্র লেট দেয়ার বি লাইট। ব্যবসায়িক, অব্যবসায়িক ও প্রামাণ্যচিত্রসহ তিনি মোট ১২টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। তাঁর নির্মিত জীবন থেকে নেওয়া (১৯৭০) চলচ্চিত্রকে ধরা হয় ভাষা আন্দোলনের বেদনা ও বিজয়ের সেরা চলচ্চিত্ররূপে।


সাহিত্যকর্ম

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি ছিলেন সফল কথাসাহিত্যিক। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত উপন্যাস হাজার বছর ধরে তাঁকে সাহিত্য মহলে এক অনন্য মর্যাদা এনে দেয়। উপন্যাসটিতে ফুটে উঠেছে বাংলার কৃষকের দুঃখ-দুর্দশা ও শোষণের চিত্র। এছাড়া বরফ গলা নদী–তে শহুরে জীবনের সংগ্রাম, আর ভাষা আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় রচিত আরেক ফাল্গুন ও একুশে ফেব্রুয়ারি–তে আছে দেশপ্রেম ও আন্দোলনের আবেগ।


মুক্তিযুদ্ধ ও আত্মত্যাগ

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জহির রায়হান কলকাতায় চলে যান। সেখান থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেন এবং তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর জনপ্রিয় চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়া প্রদর্শনের আয় তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করেন।

১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির গুলিতে নিহত হন বলে ধারণা করা হয়। পরদিন মিরপুর মুক্ত হলেও তাঁর মরদেহ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর মৃত্যু আজও এক রহস্য।

Advertisement


পুরস্কার ও স্বীকৃতি

জহির রায়হানের অবদান বারবার স্বীকৃতি পেয়েছে।

১৯৬৪ সালে হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার

১৯৬৫ সালে কাঁচের দেয়াল সিনেমার জন্য নিগার পুরস্কার

১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর)

১৯৭৭ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর)

১৯৯২ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর)

২০০৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (মরণোত্তর)



অমর স্মৃতি

সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্রের পাশাপাশি রাজনীতি ও সমাজচেতনাতেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। তাঁর কাজ আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার অমূল্য অংশ। বয়সে তরুণ হয়েও তিনি জাতিকে শিখিয়েছেন, কীভাবে শিল্পকে সমাজ ও স্বাধীনতার জন্য ব্যবহার করতে হয়।


বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সাহিত্যাঙ্গনে জহির রায়হান নামটি চিরকাল অম্লান থাকবে। তাঁর জন্মদিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে এই কিংবদন্তিকে।

Advertisement
Advertisement
Advertisement
Loading...
×