Site Logo | মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ব্রেকিং নিউজ

গণঅভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদ সরানো যায় না, তরুণরা তা প্রমাণ করেছে

গণঅভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদ সরানো যায় না, তরুণরা তা প্রমাণ করেছে

ছবি : সংগৃহীত

Advertisement

আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণরা দেশকে নতুনভাবে পথ দেখিয়েছে। তাদের আবেগ ও মনের কথা আমাদের বুঝতে হবে। ১৬-১৭ বছর ধরে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এমন অকুতোভয় তরুণ প্রজন্ম তৈরি হলো, তা এক চমকপ্রদ ব্যাপার। গণঅভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদ সরানো যায় না, যা জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণ-যুবকরা তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। 

বুধবার (১৩ আগস্ট) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তর যৌথভাবে এ আলোচনার আয়োজন করে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, একটি রাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদ নিজে নিজে তৈরি হয় না। বিগত শাসনামলে ব্যবসায়ী, আমলা, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা ফ্যাসিবাদ তৈরিতে সহযোগিতা করেছে। তারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে ন্যারেটিভ তৈরি করেছে।

Advertisement

সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে অপেক্ষাকৃত তরুণ সাংবাদিকরা লড়াই করেছেন, অথচ অনেক সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন কিংবা সেলফ সেন্সরশিপের আশ্রয় নিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের অবশ্যই সৎ ও সাহসী হতে হবে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে। এস্টাব্লিশমেন্টের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে লিখতে হবে। চ্যালেঞ্জ নিতে না পারলে ভালো সাংবাদিক হওয়া যাবে না। উভয়পক্ষের মন্তব্য নিয়েই সংবাদ পরিবেশন করতে হবে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বাকস্বাধীনতা ফিরে পেলেও পুরোপুরি মুক্ত হয়েছি কি না, তা প্রমাণিত হবে নির্বাচনের পর। নির্বাচিত সরকার যদি বিগত সরকারের পরিণতি দেখে শিক্ষা না নেয়, তাহলে ফ্যাসিবাদ আবারও ফিরে আসবে।

জ্ঞানচর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, জ্ঞানচর্চার কোনো বিকল্প নেই। কিছু বলতে গেলে আগে নিজেদের শিখতে হবে। তরুণরা যে স্পৃহা দেখিয়েছে, সেই স্পৃহা নিয়েই আমাদের এগোতে হবে।

আমার দেশ সম্পাদক বলেন, সাংবাদিকদের ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকা জানার আগে ফ্যাসিবাদ সৃষ্টিতে সাংবাদিকদের ভূমিকা জানতে হবে। হাসিনার পতনের মাত্র ১২ দিন আগে এদেশের ব্রাহ্মণ সম্পাদকরা হাসিনার কাছে গিয়ে তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যতটা কঠোর ভাবেই হোক, ছাত্রদের এই আন্দোলনকে দমন করতে হবে। ফ্যাসিবাদ সৃষ্টিতে ব্যবসায়ী, আমলা, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সবাই ভূমিকা রেখেছিল। শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট হয়েছিলেন জেনেটিকভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে, কারণ তার বাবা ছিলেন একজন বড় ফ্যাসিস্ট।

Advertisement

ওয়ান ইলেভেনের সরকার ছিলো ভারতীয় আধিপত্যবাদের চক্রান্তের একটি ফসল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে খুলনায় জিয়া হলে এক সেমিনারে আমিই সর্বপ্রথম একথা বলেছিলাম। সেদিন অনেকে সন্দেহ পোষণ করলেও পরে প্রমাণিত হয় আমি সঠিক ছিলাম। ২০১৮ সালে একদম ভুয়া মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অ্যারেস্ট করা হলো। সে সময় মির্জা ফখরুল সাহেবের উপস্থিতিতে এক মিটিংয়ে আমি বলেছিলাম, আপনার নির্বাচনের মাধ্যমে হাসিনা সরকারের পতন চাচ্ছেন- এটা ভুল। গণঅভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয় না। বিশ্বের কোথাও এর নজির নেই। আমার সেই কথা ২০২৪ সালে এ দেশের তরুণ সমাজ বুকের রক্ত দিয়ে প্রমাণ করেছে। যে হাসিনা ১৯৮১ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছিল, সেই হাসিনা ২০২৪ সালে আবারও পালিয়ে সেই ভারতে চলে গেছে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদেরকে সব সময় চ্যালেঞ্জ নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো স্টাবলিশমেন্টের ভুল নিয়ে কথা বলা। এই চ্যালেঞ্জটা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে আর বৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত তা মোকাবিলা করতে হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলন এমন এক ইতিহাস, যেখানে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশপ্রেমী ছাত্র-জনতা দেশের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী, আইন স্কুলের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর শেখ মাহমুদুল হাসান এবং ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত।

আরও বক্তব্য দেন জুলাই অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর শরিফ মোহাম্মদ খান, আমার দেশ পত্রিকার খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন এবং জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আয়মান আহাদ।

 খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আলকামা রমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী জারিন প্রভা ও ইউআরপি ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান আকাশ। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

Advertisement
Advertisement
Advertisement
Loading...
×