মৃত্যুর আগে যেন ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি: আবু সাঈদের বাবা

ছবি: সংগৃহীত
মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীর ডায়াসে দাঁড়িয়ে তিনি এ কামনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ট্রাইব্যুনাল-২’র চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এদিন বেলা ১১টা ২২ মিনিটে সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন আবু সাঈদের বাবা। ঠিক দুই মিনিট পর শপথ পড়ে সাক্ষ্য শুরু করেন। শুরুতেই নিজের পরিচয় দেন মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি শহীদ আবু সাঈদের বাবা। ১৬ জুলাই আন্দোলনে তিনি শহীদ হন।’
জবানবন্দিতে মকবুল বলেন, ‘আমার ছেলে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে রংপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিল। টিউশনি করেই নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতো।’
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ফসলের মাঠ থেকে দুপুর ১২টায় বাড়ি ফেরেন মকবুল হোসেন। ফিরতেই দেখেন সবাই কান্নাকাটি করছেন। কিছুক্ষণ পর শোনেন আবু সাঈদ মারা গেছেন।
সাক্ষী বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর খবর শুনেই আমার মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়ে। তাৎক্ষণিক খবর নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছেলে ও মেয়ের জামাইকে পাঠাই। তারা গিয়ে দেখেন আবু সাঈদের লাশ নেই। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেছে। এরপর তারা রংপুর মেডিকেলে যান। প্রথমে লাশ দেখতে চাইলে পুলিশ দেখতে দেয়নি। একপর্যায়ে ছেলে-জামাইয়ের চাপে দেখতে দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে আবু সাঈদের লাশ বাড়িতে আনা হয়। তবে প্রশাসনের লোকজন রাতেই দাফন করতে বলেন। কিন্তু আমরা রাজি না হয়ে পরদিন সকাল ৯টায় দুবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি। লাশ বাড়িতে আনার পর গোসল করানোর সময় দেখি তার মাথায় রক্ত ঝরছে। বুকে গুলির চিহ্ন। সারা বুক দিয়ে রক্ত ঝরছে। পরে শুনতে পাই আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে এএসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র।
জবানবন্দিতে মকবুল হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে আবু সাঈদকে গলা টিপে ধরাসহ চড়-থাপ্পড় মারেন ছাত্রলীগ নেতা পমেল বড়ুয়া। আমার আশা ছিল ছেলেটা চাকরি করবে। কিন্তু সেই ইচ্ছা আর পূর্ণ হলো না। যেহেতু আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। তাই আমি আশা করবো আমার মৃত্যুর আগে যেন ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি। এছাড়া আমার ছেলেকে নির্মমভাবে যারা শহীদ করেছে তাদের বিচার চাই। ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদেরও বিচার চাই।