
সূর্যমুখী একধরনের একবর্ষী ফুল গাছ। বিশে^র বিভিন্ন দেশে এই ফুলের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। দৃষ্টিনন্দন ফুল সূর্যমুখী সবার কাছে পরিচিত। সূর্যমুখীর বীজ ও তেলে রয়েছে নানান উপকারিতা। উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে সূর্যমুখী ভিলেজ গঠন করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বলেন শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। উপজেলার ভূরুলিয়া, কাশিমাড়ী, মুন্সিগঞ্জ, শ্যামনগর সহ অন্যান্য ইউনিয়নে কৃষক কর্তৃক সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভূরুলিয়া ইউনিয়নের সিরাজপুর গ্রামে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে সূর্যমুখী ভিলেজ গঠন করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় অর্ধ শতাধিকের উপরে চাষি প্রনোদনার মাধ্যমে বারি সূর্যমুখী-৩, হাইসন-৩৩ ও টিএফএস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এসকল বীজের জীবনকাল ১০০ থেকে ১২০ দিন। সাধারণত নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত মাঠে সূর্যমুখী ফুল মাঠে দেখা যায়। কৃষকরা জানান, সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার হয়ে থাকে। একটি ফুলের ব্যাস ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। সূর্যের দিকে সাধারণত সূর্যমুখী ফুল মুখ করে থাকে আর এ কারণে সূর্যমুখী ফুল আকারে বড় হয়। সূর্যমুখী ফুলের রং হয় হলুদ।

ভূরুলিয়া সিরাজপুর গ্রামের প্রকল্প ভুক্ত চাষি মিয়ারাজ, আব্দুস সাত্তার, রবিউল, মিজানুর বলেন প্রকল্প থেকে প্রনোদনার মাধ্যমে সূর্যমুখী ভিলেজে সূর্যমুখী বীজ ভাঙ্গিয়ে তেল নিস্কাসনের জন্য প্রায় ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা দামের একটি যন্ত্র প্রদান করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সূর্যমুখী ভিলেজের উৎপাদিত সূর্যমুখী ফুলের বীজ ভাঙ্গানো যাবে। এছাড়া অন্যান্য এলাকার কৃষকরা এই সুবিধা পাবেন বলে উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মহিউদ্দীন জানান। তিনি বলেন সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সূর্যমুখী ভিলেজের কৃষকদের সূর্যমুখী ফুল চাষে বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা, পরামর্শ প্রদান করা সহ অন্যান্য সহায়তা করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বলেন খুলনা কৃষি অঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বেশ ঝুঁকি রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি, উচ্চতাপমাত্রা, ঝড় , জলোচ্ছাসের কারণে এ অঞ্চলের ফসলের জমিতে লবনাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটে। শুস্ক মৌসুমে মিষ্টি পানির অভাব,শীতকাল থাকে কম সময়, মাটিতে বেশিদিন জো ধরে রাখা যায় না। এসব কারণে রবি ও খরিপ মৌসুমে এ অঞ্চলের জমি আংশিক অনাবাদী থাকে। এসব দিক বিবেচনা করে লাগসই কৃষি প্রযুক্তি, উত্তম পানি ও মাটি ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় ও জলবায়ু অভিঘাত সহনশীল ফসল চাষের মাধ্যমে এই প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলের ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হবে এবং অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় এনে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা হবে। তিনি বলেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকল্পের ১৯টি প্রযুক্তির মধ্যে সূর্যমুখী চাষ একটি। প্রকল্প এলাকায় সূর্যমুখি ফসলের চাষে কৃষকরা উপকৃত হবেন বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা হিসাবে জানান শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়ায়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, শরীরের ব্যাথা দূর করা সহ অন্যান্য গুণাবলী রয়েছে। সূর্যমুখী তেলের দাম লিটার প্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। তিনি আরও বলেন সূর্যমুখী বীজ ও তেলের বহু উপকারিতা রয়েছে। উপকূলীয় শ্যামনগরে সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণে সূর্যমুখী ভিলেজ গঠন করা হয়েছে