রবিবার, ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সীমান্তে আগুনের কুন্ডলী, রাখাইনে পুড়াচ্ছে রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত বাড়ি!

মোহাম্মদ ইউনুছ অভি,কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার আলোচনার মধ্য কক্সাজারের টেকনাফ সীমান্তে রাখাইনে আগুনের কুন্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। এতে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছে সীমান্তের বাসিন্দারা।

মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, শাহপরীর দ্বীপসহ তিনটি জায়গায় ওপারে আগুনের কুন্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।

রোহিঙ্গা বলছে, রাখাইনে পেলে আসা রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে আরাকান আর্মি। সম্প্রতি সময়ে মিয়ানমারে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত যেতে রাজি হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। যাতে রোহিঙ্গা বুঝে সেখানকার পরিস্থিতি এখনো ভালো হয়নি।

তবে সীমান্তে মিয়ানমারে অভ্যন্তরে আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে উল্লেখ করে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি অনুপ্রবেশ ঠোকাতে সর্তক অবস্থানে রয়েছে। নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের পূর্বে নাফ নদের ওপারে রাখাইনে মংডুর পেরাংপ্রæ আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। এ ছাড়া গতকালও এসব এলাকায় আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। মূলত রাখাইনে জামতলি, পেরাং প্রæ ও মাংগালা এলাকায় রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত বাড়িঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা সালা উদ্দিন বলেন, ‘সকালে নাফনদীর ওপারে রাখাইনে আগুনে ধোঁয়া দেখা গেছে। এসময় স্থানীয় লোকজন দেখতে ভীড় করে জেটিঘাটে। মূলত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আলোচনা শুরু হওয়ায় এ ধরনের ঘটনা চোখে পরছে। যাতে রোহিঙ্গা ফিরে না যায়, তাই আগুন দিয়ে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।’

টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, ‘ওপারে আগুনের কুন্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। তবে ঠিক ওপারে এখন কী হচ্ছে এপার থেকে বলা মুশকিল। এ ধরনের ঘটনা ঘটছে আবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটার সম্ভবনা রয়েছে।;

এদিকে, বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা।

সীমান্তে নজর রাখেন সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের আলোচনা শুরু হওয়ার থেকে নাফনদীর ওপারে আগুনের কুন্ডলী ও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। এর আগে বেশ কয়েকদিন ধরে দেয়া যায়নি। খবর পেয়েছি সেখানে (রাখাইনে) পেলে আসা রোহিঙ্গা পরিত্যক্ত বাড়িঘরগুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া তাঁরা জঙ্গলগুলো আগুন দিয়ে পরিস্কার করছে বলেও জেনেছি।’

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘রাখাইনে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে জেনেছি, এখনও নির্যাতন বন্ধ হয়নি সেখানে (ওপারে)। মূলত আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের মেনে নিতে পারছেনা। এছাড়া প্রত্যাবাসনের আলোচনা পর সেখানে (রাখাইনে) রোহিঙ্গাদের ঘর থেকে বাইরে এনে উত্তাপ রোদে বসিয়ে রাখছে ঘন্টার পর ঘন্টা।;

তিনি বলেন, ‘তাছাড়া নতুন করে রাখাইনে জ্বালাপোড়া করছে আরাকান আর্মি। তারা আমাদের রেখে আসা বাড়িঘর গুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে। যাতে ফিরে গেলেও (বাড়িঘরে) উঠতে না পারি। এটি মূলত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে রজি হওয়ায়, সেজন্য বাড়িঘরে আগুন দিয়ে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে নতুন করে।’

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘নতুন করে রাখাইনে আরাকান আর্মির জ্বালাপোড়া হচ্ছে। যার ফলে সীমান্তে আগুনের কুন্ডলী ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে। এতে নতুন করে অনুপ্রবেশের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায়না। তবে সীমান্তে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাজ করে যাচ্ছে।

পাঠক প্রিয়,

আপনিও আবাসননিউজ২৪.কম-এ ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি নিয়ে লিখতে পারেন।

আপনার লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ abasonnewsfeature@gmail.com