শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হাসিনার ‘বিদ্বেষমূলক মন্তব্য’ বন্ধে মোদির হস্তক্ষেপ কামনা ইউনূসের

আবাসন নিউজ ২৪, অনলাইন ডেস্কঃ

বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানান। পাশাপাশি, তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়ানোর অভিযোগও তোলেন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ জানান, শেখ হাসিনা যেন বাংলাদেশ কে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন, যা ভারতের আতিথেয়তার লঙ্ঘন বলে মনে হয়। ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ধারাবাহিক মিথ্যা ও বিদ্বেষমূলক অভিযোগের কথাও উল্লেখ করেন এবং ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। ইউনূস সরকার শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য ফেরত পাঠানোর দাবি জানায় এবং অভিযোগ করে যে, তিনি দিল্লি থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গোপন বন্দিশিবির পরিচালনা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আটকে রাখা, গুম ও হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। হত্যা ও গুমসহ তিনটি মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। সরকার প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতকে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠালেও দিল্লি এখনও কোনো উত্তর দেয়নি।
তবে, মার্চ মাসে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনূস স্পষ্ট করে বলেন, শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে, তিনি দেশে থাকুন বা না থাকুন।
বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো, তার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোর অভিযোগ, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ, গঙ্গা ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, সীমান্ত হত্যা ও দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়।
ইউনূস জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করেন, যেখানে ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র উঠে এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বিক্ষোভ সম্পর্কিত ১৪০০ মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশ শিশু। এছাড়াও প্রতিবেদনে খুন ও নির্যাতনের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা নিজে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন এবং আন্দোলনের নেতাদের গ্রেপ্তার, হত্যা ও লাশ গুমের নির্দেশ দেন।
বাসস জানায়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে উসকানি ছড়ানোর অভিযোগের বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করেছেন।
মোদী বলেন, শেখ হাসিনার মন্তব্য ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দায়ী। ভারতের সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়, বরং একটি দেশের সঙ্গে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতকে উপায় খোঁজার আহ্বান জানান। জবাবে মোদী বলেন, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী কেবল আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় এবং প্রাণহানির ঘটনাগুলো ভারতের সীমান্তের মধ্যেই ঘটে। তবে, দুই নেতা বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ নিয়ে বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মোদী। তবে ইউনূস তাকে জানান, সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবরের ‘বেশিরভাগই ভুয়া’। সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ অনুসন্ধানে তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দেভাল উপস্থিত ছিলেন।

পাঠক প্রিয়,

আপনিও আবাসননিউজ২৪.কম-এ ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি নিয়ে লিখতে পারেন।

আপনার লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ abasonnewsfeature@gmail.com