
পুণ্যস্নান ও নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার(২৭ মার্চ) অনুষ্ঠিত হল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোনার মোড় নামক স্থানে ইতিহাস খ্যাত যমুনা ও ইছামতি নদীর সংযোগ স্থলে ঐতিহ্যবাহী প্রায় দেড়শত বছরের বারুণী উৎসব। বৃহস্পতিবার বারুণীর উৎসব উপলক্ষে খুব সকাল থেকে শ্যামনগরসহ বিভিন্ন এলাকার পুণ্যার্থীরা মৃত যমুনা কুলে এসে উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় দেখা যায় যাদের মানত ছিল তাদের অনেকে গঙ্গা দেবীর মূর্তি নিয়ে মন্ডপস্থলে পুণ্যের আসায় আসেন। এ সময়ে বহু ভক্তবৃন্দ বা পুণ্যার্থীরা যমুনায় পুণ্য স্নান করবেন।
উৎসবের পুরোহিত হরিপদ মুখ্যার্জী জানান, চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণ এয়োদশ তিথিতে বারুণী উৎসবে বিভিন্ন এলাকার ব্রাহ্মণ সমাজের অনেক ব্যক্তি এসে পূজা অর্চনা করে থাকেন। বিভিন্ন পুণ্যার্থীগণ মাসিক, বার্ষিক শ্রাদ্ধকার্য ব্রাহ্মণের মাধ্যমে সমাপ্ত করে থাকেন। এ ছাড়া গোকিস্তিসহ অন্যান্য ধর্মীয় কার্য সম্পাদন করেন। বারুণীর উৎসব আয়োজক কমিটির প্রধান বরুণ কুমার ঘোষ বলেন, এ বছর ১৪৮তম বারুণীর উৎসব চলছে। তিনি উৎসবের স্থলে পাকা বেদী নির্মানের জন্য ও যমুনা নদী পুনঃখননের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। পুরোহিত হরিপদ মুখ্যার্জী ,বিবেকানন্দ মুখ্যার্জী ও অন্যান্যরা জানান ঐতিহ্যবাহী বারুণীর উৎসবের আয়োজক বংশীপুর ঘোষ পরিবার।
এ বারুণীর মেলায় অতীতের ন্যায় দেশীয় মৃৎ, বাঁশ বেত তালপাতারসহ বিভিন্ন প্রকার হস্ত শিল্প জাত দ্রব্যের সমাগম ঘটে।তবে অতীতের ন্যায় বাইচকোপ, পুতুল নাচ, যাত্রা সহ অন্যান্য বিনোদনমূলক উৎসব এখন পালিত হয়না। মেলার আগত ৪৭ বছর বয়সের দর্শণার্থী রবীন্দ্র নাথ মন্ডল বলেন, আগে এ বারুণীর উৎসবকে কেন্দ্র করে মাসব্যাপী মেলা চলত। মেলায় যাত্রা, পুতুল নাচসহ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকত। এ মেলায় শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়, অন্যান্য ধর্মের লোকজনও পরিবার পরিজন নিয়ে আসেন।

মেলার শান্তি শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে। মেলায় দর্শণার্থী ও পুণ্যার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে মেলার আগত পুণ্যার্থীবৃন্দ দাবি করেছেন উৎসব সংলগ্ন স্থানে স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারী ল্যাট্রিন স্থাপনের। লোকজ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে নানান আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী এ গ্রামীন মেলা ও উৎসব।