২০১৩ সালের ৫ মে- ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ব্লগারদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি এবং নারী নীতির বিরোধিতাসহ ১৩ দফা দাবিতে ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার হেফাজতকে মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানায়। ওইদিন দিনভর উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে মতিঝিল এলাকায়। শেষ পর্যন্ত মধ্যরাতে চলা যৌথ অভিযানে মতিঝিল শাপলা চত্বর ছাড়তে বাধ্য হন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
সেই অভিযানে নিহতদের মধ্যে ৯৩ জনের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটি জানিয়েছে, এটি একটি প্রাথমিক খসড়া তালিকা এবং যাচাই-বাছাই শেষে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ঐতিহাসিক সমাবেশের একযুগ পূর্ণ হলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে এ উপলক্ষ্যে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, ৫ মে উপলক্ষ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি।
২০১৩ সালের পর হেফাজতের অনেক নেতা গ্রেপ্তার ও মামলার মুখোমুখি হন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে সংগঠনটি এক সময় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠেছিল। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদ্রাসার ‘শোকরানা মাহফিলে’ হেফাজতের তৎকালীন আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফি ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে কওমি জননী উপাধি দিয়েছিলেন আল্লামা আহমদ শফি।
শেখ হাসিনার সরকার হেফাজতের চাপের মুখেই কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দেওয়াসহ বেশ কিছু দাবি দাওয়া মেনে নিতেও বাধ্য হয়েছিল।
২০১৩ সালের ক্ষত শুকাতে-শুকাতে ২০২১ সালে আবার বড় বিপর্যয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। ওই বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের বিরোধিতা নেওয়া কর্মসূচিকে ঘিরে সারাদেশে সহিংসতায় কমপক্ষে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। ওই ব্যাপাক ধরপাকড় করা হয় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। এতে আবারও সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবারও হেফাজতে ইসলাম সক্রিয় হয়ে উঠে।
২০১০ সালে যাত্রা শুরু করেছিল হেফাজতে ইসলাম। ২০১১ সালে নারী নীতি প্রণয়নের বিরুদ্ধে হরতাল ডেকেছিল। মূলত ২০১৩ সালের ৫ মের কর্মসূচি ঘিরে আলোচনায় আসে হেফাজত।