
গলদা চিংড়ি চাষ বাংলাদেশে একটি লাভজনক ব্যবসা। এখানে আধুনিক চাষ পদ্ধতির ধাপে ধাপে গাইড দেওয়া হলো:
১. উপযুক্ত স্থান নির্বাচন
-
এমন স্থান নির্বাচন করুন যেখানে ভাল পানি প্রবাহ ও পর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে।
-
পুকুরের গভীরতা ৩-৫ ফুট হওয়া উচিত এবং তলার মাটি কাদাযুক্ত হলে ভালো হয়।
-
জলাভূমি বা উপকূলীয় এলাকায় গলদা চিংড়ি চাষ সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
২. পুকুর প্রস্তুতি
-
পুকুরের নিচু স্থান ভরাট করুন ও বাঁধগুলো মজবুত করুন।
-
পানির pH মাত্রা ৬.৫-৮.৫ এর মধ্যে থাকতে হবে।
-
চুন (লাইম) ও জৈব সার প্রয়োগ করে জলজ জীবাণুর ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
৩. রেণু সংগ্রহ ও পোনা চাষ
-
চিংড়ির রেণু পোনা সরকারি বা বেসরকারি হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করুন।
-
রেণুগুলোকে ৭-১০ দিন আলাদা ট্যাংকে acclimatization (পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো) করান।
-
প্রতি ৪০০-৫০০টি পোনা প্রতি শতাংশে ছাড়া যায়।
৪. খাদ্য সরবরাহ ও যত্ন
-
উন্নতমানের চিংড়ি খাদ্য ব্যবহার করুন, যাতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ও মিনারেলস থাকে।
-
দিনে ২-৩ বার খাদ্য সরবরাহ করুন (সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায়)।
-
অতিরিক্ত খাদ্য না দেওয়া ভালো, কারণ এটি পানির গুণগত মান নষ্ট করতে পারে।
৫. পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ
-
পানির pH, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া ও নাইট্রেট নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
-
প্রতি ১৫-২০ দিন অন্তর ৩০% পানি পরিবর্তন করুন।
-
পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য অ্যারেটর (Aerator) ব্যবহার করতে পারেন।
৬. রোগ প্রতিরোধ ও যত্ন
-
ব্যাকটেরিয়াল ও ফাঙ্গাস ইনফেকশন প্রতিরোধে পানির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
-
চিংড়ির শরীরে লালচে দাগ, খোলস নরম হওয়া বা অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৭. সংগ্রহ ও বিপণন
-
৩-৪ মাস পর চিংড়ি বাজারজাত করার জন্য প্রস্তুত হয়।
-
মুনাফা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় বাজার, সুপারশপ ও বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করুন।
-
ভালো মানের চিংড়ির দাম বেশি পাওয়া যায়, তাই সঠিক যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
গলদা চিংড়ি চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা যা সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে পারে। সরকারি প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করলে আরও ভালো উৎপাদন সম্ভব।