

তানহা আক্তার
খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধিবৃহস্পতিবারের ঘটনা। রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেফতার জানে আলম অপুর দেওয়া বক্তব্যের জেরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, মাঝেমধ্যে রাতে তার কাজ শেষ হতে ভোর হয়ে যায়। সে সময় বাসায় খাওয়া-দাওয়া দেওয়ার মতো কেউ না থাকায় তিনি বেশির ভাগ সময় ৩০০ ফুটের নীলা মার্কেটে যান হাঁসের মাংস খেতে। আর বেশি ভোর হয়ে গেলে নীলা মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনি যান গুলশানের ওয়েস্টিনে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। শুক্রবার দিনভর বিষয়টি ছিল সাধারণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
আসিফ মাহমুদ একই সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, ‘অপুর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। আমার মনে হয় না এখনও কেউ এরকম প্রমাণ দিতে পেরেছেন যে, আমার সম্পৃক্ততা আছে। বরং যার (জানে আলম অপু) সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, এই সাক্ষাৎকার একজন রাজনৈতিক নেতার বাসায় একজনকে জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, এটা অত্যন্ত গুরুতর একটা অভিযোগ। এটা পরিবারের দিক থেকে এসেছে, যথেষ্ট রিলায়াবল, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে যে আমার সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এরকম অনেক কিছু আপনারাও ইতিমধ্যে দেখেছেন। আমরা সেগুলো ডিফেন্ড করেছি। এখন দেখছেন, সামনেও হয়তো দেখবেন।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে (চাঁদাবাজির অভিযোগ) যেহেতু এখনও তদন্ত চলছে, এটা নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়, তারপরও যেহেতু আমার নাম সুনির্দিষ্টভাবে সেখানে এসেছে, নাম আসার পরে আমি এক রকম অবাকই হই।’
তিনি বলেন, ‘জানে আলম আপুকে আমি চিনতাম যখন ছাত্র অধিকার পরিষদে ছিলাম, ২০২২ সালে যখন আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেও ছাত্র অধিকার পরিষদ করত, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে প্রথমে ছিল। তখন চিনতাম, কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তার সঙ্গে আমার কোনো কথা বা দেখা হয়নি।’
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘এ ধরনের একটা ক্লেইম আসার পর আমরা আরেক জায়গা থেকে জানতে পারলাম আজকে তার স্ত্রী পরিচয় একজন সংবাদ সম্মেলন করেছেন, আমি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি আসলে কি ঘটনা। তিনি সেখানে দাবি করেছেন অপুকে গুম করে এ স্টেটমেন্ট (চাঁদাবাজিতে তাকে জড়িয়ে বক্তব্য) আদায় করা হয়েছে। এ রকম কিছু যদি হয়ে থাকে, তবে সেটা আসলেই অত্যন্ত শঙ্কাজনক। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আমরা যদি আবার আগের মত... এটা আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট রুমেও তো আপনারা জানেন, এখানে আয়না ঘর ছিল। সেগুলো ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ফলে অকার্যকর। সেই প্র্যাকটিসের দিকেই আমরা যাচ্ছি কিনা, সেটাও ভাবনার বিষয়।’
সেদিন হোটেল ওয়েস্টিনের সামনে আপনি গিয়েছিলেন কি না, সিসিটিভির ফুটেজে দাবি করা হচ্ছে, সেদিন ভোররাতে আপনি মোটরসাইকেলে করে সেখানে গিয়েছিলেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাতে যখন আমার কাজ শেষ হয়ে যায়, কখনো কখনো ভোর হয়ে যায়। ওই সময় আসলে বাসায় খাবার-দাবার দেওয়ার মত কেউ থাকে না। আমি বেশিরভাগ সময়ই তিনশফিটে নীলা মার্কেট নামে একটা জায়গায় আছে, সেখানে যাই। সেখানে হাঁসের মাংস খুব ভালো পাওয়া যায়, সেখানে আমরা চার-পাঁচ জন মিলে যাই। ওইটা আবার বেশি ভোর হয়ে গেলে বন্ধ থাকে। তখন ওদিকে ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়। তবে ওই দিন আমি গিয়েছিলাম কিনা, সেখানে ছিলাম কিনা- সেটা আমি বলতে পারবো না।’
সেটা ছিল ১৭ জুলাই-জানাতেই তিনি বলেন, ‘দেখেন সিসিটিভির ফুটেজে হেলমেট পড়া যদি যে কাউকে আমি বলে দাবি করা হয়, এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য। আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না, কারণ এটা তদন্তাধীন।’
তার এমন বক্তব্যে সরকারের উপদেষ্টারা কী ধরনের সুযোগ সুবিধা পান বা তাদের বেতন ভাতা কত, আর তা দিয়ে অভিজাত হোটেলে যাওয়ার বিষয়গুলো নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।