ড্যাপ সংশোধন: ঢাকায় ভবন নির্মাণে এফএআর দ্বিগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি, উঁচু ভবনে নতুন সুযোগ

ঢাকা শহরের আকাশরেখায় বড় পরিবর্তনের আভাস মিলছে। রাজধানীর ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধনের মাধ্যমে ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআর দুই গুণ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে ঢাকার প্রায় সব এলাকায় উচ্চতার সীমা আগের তুলনায় বাড়বে এবং ছোট প্লটেও বড় আকারের ভবন নির্মাণের সুযোগ তৈরি হবে।
রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, সংশোধিত ড্যাপে রাজধানীকে ৬৫টি জনঘনত্ব ব্লকে ভাগ করে নতুন এফএআর নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল রবিবার ১০ আগস্ট ড্যাপ সংশোধন এবং ঢাকা ইমারত বিধিমালা ২০২৫ চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে রিহ্যাব, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব প্ল্যানার্স, রাজউক এবং উপদেষ্টা পরিষদের মতামত নিয়ে খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। এখন কমিটির অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
এফএআর বা ফ্লোর এরিয়া রেশিও হলো একটি প্লটে কতটুকু মোট ফ্লোর স্পেসে ভবন নির্মাণ করা যাবে তার অনুপাত। উদাহরণস্বরূপ, ১ হাজার বর্গফুট জমির এফএআর যদি ১ দশমিক ৫ হয়, তবে মোট ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট ফ্লোর স্পেসে ভবন নির্মাণ করা যাবে।
নতুন পরিকল্পনায় এলাকাভিত্তিক সর্বোচ্চ এফএআর নির্ধারণ করা হয়েছে গুলশান ও বনানীতে ৫ দশমিক ৫, বসুন্ধরায় ৪ দশমিক ১, বারিধারায় ৪ দশমিক ৭, ধানমন্ডিতে আবাসন এফএআর ২ দশমিক ১, জলসিঁড়ি ও উত্তরা তৃতীয় পর্বে ২ দশমিক ১ এবং মিরপুরে ২ দশমিক ০। রামপুরা, বাড্ডা, তেজগাঁও, তারাবো, হেমায়েতপুর, সাভার ও টঙ্গীতে সর্বোচ্চ এফএআর ২ দশমিক ৩। পান্থপথ, মহাখালী, নিকেতন, খিলক্ষেত, আফতাবনগর, বনশ্রীসহ বহু এলাকায় এফএআর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিমানবন্দর এলাকার জন্য এখনো এফএআর নির্ধারিত হয়নি।
সংশোধিত নীতিমালায় সেটব্যাক এলাকা ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ রাখা হবে এবং আলো-বাতাস নিশ্চিত করতে ভবনের মধ্যবর্তী কৌণিক দূরত্ব কমপক্ষে ৭২ ডিগ্রি রাখার প্রস্তাব রয়েছে।
ঢাকা ইমারত বিধিমালা ২০২৫-এ নতুন কয়েকটি শর্ত যোগ করা হয়েছে। ৭০ শতাংশ বা ৪২ দশমিক ৪৩ কাঠা থেকে দেড় একরের কম জমিতে অ্যাপার্টমেন্ট বা ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের জন্য নগর পরিকল্পনাবিদের অনুমোদন লাগবে। দেড় একরের বেশি জমিতে নির্মাণ করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার ছাড়পত্র নিতে হবে। নদীতীরবর্তী বা বন্যাপ্রবণ এলাকায় প্রকল্প গ্রহণের সময় বন্যা প্রবাহ এবং পানি নিষ্কাশনের প্রভাব বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য জমি অধিগ্রহণ করলে মালিককে তিন গুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল লতিফ মনে করেন, ঢাকায় মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় উঁচু ভবনের সুযোগ বাড়ানো জরুরি। তার মতে, বর্তমান এফএআর পর্যাপ্ত নয় এবং ন্যূনতম ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ০ হওয়া উচিত, যাতে আটতলা ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের প্রেসিডেন্ট আদিল মোহাম্মাদ খান বলেছেন, এফএআর বৃদ্ধিতে আলো-বাতাসের প্রবাহ কমে যাবে, আকাশ দেখা কঠিন হবে এবং কাঠামোগত বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তিনি মনে করেন, বর্তমান এফএআরই ঢাকার জন্য যথেষ্ট এবং নতুন নীতিমালা ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বেশি উপযোগী।
২০২২ সালের ২৪ আগস্ট কার্যকর হওয়া ড্যাপ শুরু থেকেই ডেভেলপার ও জমির মালিকদের আপত্তির মুখে পড়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারকেও সংশোধনের দাবি জানানো হয়। সর্বশেষ গত ২০ মে ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজউক ঘেরাও করে ড্যাপ সংশোধনের আল্টিমেটাম দেয়।
এই সংশোধনের মাধ্যমে আবাসন ব্যবসায়ীরা বড় প্লটের পাশাপাশি ছোট প্লটেও বহুতল ভবন নির্মাণে আগ্রহী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এটি ঢাকার ভবিষ্যৎ নগরায়ন ও পরিবেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।