গভীর সমুদ্র মাছ আহরণ ও প্রাণিসম্পদ খাত আধুনিকায়নে জোর তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার

ড. মুহাম্মদ ইউনূস : ছবি-সংগৃহীত
গভীর সমুদ্রের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং প্রাণিসম্পদ খাতকে আধুনিকায়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি ব্যতিক্রমী মন্ত্রণালয়, যার আওতায় সমুদ্র, খামার, গবেষণা—সবকিছুই রয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো আমাদের সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করতে পারিনি। গভীর সমুদ্র মাছ আহরণ খাতটি বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।”
ড. ইউনূস বঙ্গোপসাগরে সঠিক জরিপ চালানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “আমাদের জানতে হবে, কী ধরনের মাছ আছে, কী হারাচ্ছি এবং কেন পিছিয়ে পড়ছি। প্রয়োজনে জাপান ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর অভিজ্ঞতা গ্রহণ করা যেতে পারে।”
তিনি জানান, জাপান ইতোমধ্যে এই খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে সঠিক তথ্য ও গবেষণার ভিত্তিতেই যেকোনো যৌথ উদ্যোগে এগোতে হবে।
গভীর সমুদ্র আহরণকে ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তরের তাগিদ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটি শুধু বেশি মাছ ধরার বিষয় নয়, বরং একটি শিল্প গড়ে তোলার বিষয়। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটকে আরও সক্রিয় করে তুলতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে বৈশ্বিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে।”
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ‘ডীপ সি ফিশিং’ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, “এভাবেই আমরা ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করতে পারব।”
প্রাণিসম্পদ খাতে সমস্যা ও সম্ভাবনা প্রাণিসম্পদ খাতের প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, “খাদ্যের সংকট, রোগ এবং ভ্যাকসিনের উচ্চমূল্য এখনো গবাদিপশু খামারিদের জন্য বড় সমস্যা। স্থানীয়ভাবে পশুখাদ্য ও ভ্যাকসিন উৎপাদনের উপায় খুঁজে বের করাই হবে টেকসই সমাধান।”
বিশ্বের হালাল মাংস বাজারে বাংলাদেশের বড় সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, “মালয়েশিয়া হালাল মাংস শিল্পে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। এ সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগানো উচিত।”
কোরবানির পশুর চামড়া ও চিড়িয়াখানা সংস্কার প্রসঙ্গ কোরবানির ঈদকে ঘিরে কাঁচা চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আগামী বছর যেন একই পরিস্থিতি না হয়, তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ন্যায্য ও স্বচ্ছ বাজার নিশ্চিত করতে হবে।”
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, “পশুদের কষ্ট ও খাবার চুরির অভিযোগ অত্যন্ত অমানবিক। পুরো চিড়িয়াখানার সংস্কার ও পশু হাসপাতালগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।”
উপস্থিত কর্মকর্তারা বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমাদ তাইয়্যেব এবং সংশ্লিষ্ট সচিববৃন্দ।