৩০ জুলাই ২০২৪ একটি ইতিহাস গড়ার দিন হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের জন্য

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ এই দিনে তাদের দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে। ৯ দফা দাবির ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আদালত চত্বর ও দেশের প্রধান প্রধান সড়কে প্রতিবাদে মুখর হয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা।
সামাজিক মাধ্যমে এই প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক জুড়ে প্রোফাইল পিকচারে লাল রঙের ছোঁয়া—প্রতীক হয়ে ওঠে প্রতিবাদের। শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সংস্কৃতিকর্মী—সবাই লিখেছেন, “শুধু কোটা নয়, গোটা দেশের সংস্কার দরকার।”
এই দিনটি শুধু প্রতিবাদের নয়, ছিল শোকাবহও। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু-শিক্ষার্থীদের প্রাণহানিতে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা জাতি।
আহাদ—যিনি বাবামায়ের কোলেই প্রাণ হারান,
নারায়ণগঞ্জের রিয়া গোপ—৬ বছর বয়সে বাড়ির ছাদে খেলতে গিয়ে গুলিতে নিহত,
১৩ বছরের মোবারক—মিছিল দেখতে গিয়ে প্রাণ হারান,
টিয়ার গ্যাস থেকে বাঁচতে জানালা বন্ধ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় সামি (১১), হোসাইন (১০), তাহমিদ ও সাদ মাহমুদ (১৪), নাঈমা ও ইফাত (১৬)।
এই ঘটনাগুলো ছিল প্রতিবাদের আগুনে ঘি ঢালা। সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো গানে গানে প্রতিবাদ জানায় সহিংসতার বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে তারা আড়াই ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করে।
একইদিন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত চত্বরে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি। প্রিজন ভ্যানে আটক প্রিয়জনকে এক নজর দেখতে উদগ্রীব স্বজনরা। এদিকে আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন—এই সহিংসতার পরিকল্পনাকারী কারা, কারা অর্থ যুগিয়েছে—সবই সরকারের হাতে আছে।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধকরণ সরকারের ইস্যু ঘোরানোর কৌশল মাত্র।
এদিন হাইকোর্টে সহিংসতার ঘটনায় আটক ‘কোটা সংস্কার সমন্বয়কারীদের’ মুক্তি চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি হয়। আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে প্রশ্ন করে, “তারা যদি নিরাপত্তাহীনতা বোধ না করে, তাহলে ডিবিতে আটক কেন?”
ডিএমপির তথ্যমতে, এই আন্দোলন ঘিরে মোট ২৬৪টির বেশি মামলা হয়, যার মধ্যে ৫৩টি হত্যা মামলা। গ্রেফতার হন ২৮০০ জনের বেশি।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা বিটিভি ভবন পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, এই সহিংসতায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি এবং তাদের উত্তরসূরিরা জড়িত।
অভিভাবকেরা ঢাকা মেডিকেল চত্বরে মৌন অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। একই সঙ্গে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’ ১১ দফা দাবি পেশ করে, যার মধ্যে রয়েছে হতাহতদের তালিকা প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের আহ্বান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহতদের দেখতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যান। সরকারও সারাদেশে এক দিনের শোক পালন করে। তবে আন্দোলনকারীরা বলেন, “গুলি করে মানুষ মেরে পরে শোক পালন, এটা শোকের নাটক ছাড়া আর কিছু নয়।”