গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী শ্রীপুর ইউনিয়নে ভয়াবহ নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই শ্রীপুর এলাকার অর্ধশতাধিক বসতভিটা, ফসলি জমি, ফলের বাগান ও গ্রামীণ সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকির মুখে রয়েছে কবরস্থানসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রাম। ভাঙনের স্থান থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, কয়েক বছর আগেও তিস্তা নদী ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। ওই সময় কৃষকরা এ এলাকায় ধান, গম, আলু, ভুট্টা, পাট ও কচুর চাষ করতেন। এখন এসব জমি একের পর এক ভেঙে নদীতে মিলিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাবুর বাজার থেকে পুটিমারি পর্যন্ত ভাঙন বিস্তৃত। গত দুই সপ্তাহেই নদীতে বিলীন হয়েছে অন্তত ৩০০ বিঘা ফসলি জমি। ধসে যাওয়া জমির মধ্যে পাট, কচু এবং আমন ধানের বীজতলা ছিল। ঝুঁকির মুখে রয়েছে দত্তরখামারপাড়া, দক্ষিণ শ্রীপুর, বাবুর বাজার ও পুটিমারি গ্রামের মানুষ। এরই মধ্যে দুটি গ্রামীণ সড়ক ভেঙে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তার পানিতে প্রচণ্ড ঢেউ উঠছে। নদী তীরবর্তী মানুষ ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে, গাছপালা কেটে সরিয়ে নিচ্ছে, আবার কেউ কেউ তাড়াহুড়ো করে ফসল তুলছে জমি থেকে।
বাবুর বাজার গ্রামের আব্দুল জলিল জানান, “আমার ৩৬ শতক জমির মধ্যে ২২ শতাংশ ভেঙে গেছে। বাড়িঘরও সরাতে হয়েছে।”
একই গ্রামের ইয়াসউদ্দিন বলেন, “সাত শতাংশ জমিতে কচুর চাষ করেছিলাম, সবই তিস্তা গিলে ফেলেছে। পরিবার নিয়ে এখন আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।”
দত্তরখামার পাড়ার লেবু মণ্ডল জানান, তাঁর ৫ বিঘা জমি ইতোমধ্যেই নদীতে চলে গেছে, আরও চার বিঘা ভাঙনের মুখে।
দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মমিনুর ইসলাম বলেন, “এক সময় নদী দেখতে যেতাম, আজ নদীই আমার জমি গিলে খাচ্ছে। পাট পরিপক্ব হওয়ার আগেই জমি নদীতে পড়ে গেল।”
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, “শ্রীপুর থেকে বাবুর বাজার পর্যন্ত ভাঙন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হচ্ছে।”
ভাঙনের তীব্রতা দেখে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আরও অনেক পরিবার নিঃস্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।