৪০০ বছরের প্রাচীন ঘাঘড়া খানবাড়ি জামে মসজিদ

৪০০ বছরের প্রাচীন ঘাঘড়া খানবাড়ি জামে মসজিদ
শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ঘাঘড়া লস্কর এলাকায় অবস্থিত ঘাঘড়া খানবাড়ি জামে মসজিদ হচ্ছে মুঘল আমলের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। বাংলা ১২২৮ সাল তথা ইংরেজি ১৬০৮ সালে নির্মিত এ মসজিদটি স্থানীয় ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, পালানো খা ও জব্বার খা নামে দুই ভাই এক সময় এক অজানা রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তাঁরা শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে আশ্রয় নেন এবং মসজিদটি নির্মাণ করেন।
মসজিদটির ইট চারকোনা টালির মতো, যেগুলোর ব্যবহার প্রায় ৬০০-৭০০ বছর আগেও দেখা গেছে। নির্মাণে ঝিনুকের চূর্ণ, সুরকি, পাটের আঁশ ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহৃত হয়েছে। এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি ৩০x৩০ ফুট বর্গাকৃতির এবং এর দেয়াল ৪ ফুট পুরু। ভেতরে রয়েছে ২টি খিলান, একটি মেহরাব, এবং দেয়ালে নানান রঙের ফুল ও ফুলদানির কারুকাজ। মূল গম্বুজের চারপাশে ছড়ানো ১২টি ছোট-বড় মিনার মসজিদটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। মসজিদ প্রাঙ্গণে আছে ৫৮ শতাংশ জমি, যার মধ্যে ১৭ শতাংশে মূল ভবন ও বারান্দা, বাকি ৪১ শতাংশে কবরস্থান।
মসজিদের ভেতরে ৩ কাতারে প্রায় ৩০-৩২ জন মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। বারান্দায় আরও ১০০ জন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। সবমিলিয়ে প্রায় ১৫০ মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদের প্রধান দরজায় ছিল খোদাইকৃত একটি কষ্টিপাথর, যাতে আরবি ভাষায় মসজিদের নির্মাণকাল উৎকীর্ণ ছিল। ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে এই মূল্যবান পাথরটি চুরি হয়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, এই পাথরের মূল্য কোটি টাকার বেশি। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এটি উদ্ধার না হওয়ায় মুসল্লিদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মসজিদ কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম জানান, চুরির পরপরই প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়। তবে এ পর্যন্ত কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি। মুফতি রফিকুল ইসলাম, মসজিদের খতিব, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করে বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন, কিন্তু পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় মেম্বার আকবর আলী বলেন, মসজিদটি আমাদের আঞ্চলিক গৌরব হলেও অবহেলার কারণে তা জৌলুস হারাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল আলম রাসেল জানিয়েছেন, মসজিদের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চারশো বছরের পুরোনো এই ঘাঘড়া খানবাড়ি জামে মসজিদ কেবল একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এর সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং যথাযথ প্রচার রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়িত্ব। অবিলম্বে কষ্টিপাথরের পুনরুদ্ধার ও মসজিদের পূর্ণাঙ্গ রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।