| ২২ জুলাই ২০২৫
শিরোনাম:

শিশুদের শরীর পুড়ে গেলে জরুরি করণীয়: দ্রুত পদক্ষেপেই বাঁচতে পারে একটি জীবন

শিশুদের শরীর পুড়ে গেলে জরুরি করণীয়: দ্রুত পদক্ষেপেই বাঁচতে পারে একটি জীবন

শিশুদের শরীর পুড়ে যাওয়া একটি মারাত্মক ও হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। আগুন, গরম পানি, তেল, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা রাসায়নিক পদার্থে পোড়া শিশুর জন্য শুধু তীব্র শারীরিক যন্ত্রণা নয়, মানসিক ট্রমা ও স্থায়ী বিকলাঙ্গতার ঝুঁকিও বয়ে আনে। কিন্তু একটি ভুল সিদ্ধান্ত বা অসচেতনতা অনেক সময় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ফলে, এমন দুর্ঘটনার পরপরই করণীয় সম্পর্কে অভিভাবকদের স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর শরীর পুড়ে গেলে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্তই তার জীবন বাঁচাতে পারে। সাধারণত শরীর পুড়ে যাওয়া তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়—প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডিগ্রি পোড়া। প্রথম ডিগ্রিতে ত্বকের উপরিভাগে সামান্য লালচে ও ব্যথা দেখা যায়। দ্বিতীয় ডিগ্রিতে ফোস্কা পড়ে এবং তীব্র যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। তৃতীয় ডিগ্রিতে ত্বকের গভীর স্তরসহ স্নায়ু পুড়ে যায়, যা সবচেয়ে বিপজ্জনক।

দুর্ঘটনার পরপরই প্রথম করণীয় হলো—শিশুটিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং পোড়া স্থানে ১০ থেকে ২০ মিনিট ধরে ঠাণ্ডা (কিন্তু বরফ নয়) পানি ঢালা। এতে ব্যথা কিছুটা কমে এবং ত্বকের গভীর ক্ষতি রোধ করা যায়। পোড়া স্থানে কাপড় থাকলে তা সাবধানে খুলতে হবে, তবে কাপড় যদি ত্বকের সঙ্গে লেগে যায় তাহলে টানাটানি না করে চারপাশ কেটে আলাদা করতে হবে।

অনেক অভিভাবক তড়িঘড়ি করে দাঁতের মলম, ঘি, ডিম, তেল বা মাটি পোড়া স্থানে লাগান, যা একদমই করা যাবে না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এছাড়া ফোস্কা ফাটানো, ঘষে পরিষ্কার করা কিংবা বরফ ব্যবহার করাও বিপজ্জনক। এসবের পরিবর্তে পরিষ্কার ও শুকনো গজ বা পাতলা কাপড় দিয়ে পোড়া স্থান ঢেকে দ্রুত কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. সানজিদা রহমান বলেন, “শিশুদের পোড়া ক্ষতের ক্ষেত্রে এক মিনিট দেরিও অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেক সময় সামান্য মনে হওয়া পোড়া গভীর ক্ষত তৈরি করে। তাই কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সঠিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।”

বর্তমানে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিট চালু রয়েছে। এসব কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা দিয়ে থাকে।

শিশুদের নিরাপদ রাখতে রান্নাঘরে প্রবেশ সীমিত রাখা, গরম পানি ও কেটলি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা এবং বৈদ্যুতিক তার ঢেকে রাখা জরুরি। বাড়িতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকা, স্যালাইন, গজ ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা এবং জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একটি সন্তান পোড়া আঘাতে পড়লে শুধু তার শরীরই নয়, পুরো পরিবারের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ নেমে আসে। তাই আগে থেকেই সচেতনতা ও প্রস্তুতি থাকলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। শিশুদের সুরক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমাজের সকল স্তরের দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি, যাতে আর কোনো শিশুর জীবন আগুনে ঝলসে না যায়।

শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডে অভিভাবকের ফোন ও রক্তের গ্রুপ সংযোজনের নির্দেশ হাইকোর্টের

শিশুদের শরীর পুড়ে গেলে জরুরি করণীয়: দ্রুত পদক্ষেপেই বাঁচতে পারে একটি জীবন

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর আইডি কার্ডে বাবা-মা বা অভিভাবকের মোবাইল নম্বর এবং রক্তের গ্রুপ বাধ্যতামূলকভাবে সংযোজনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। শিক্ষাসচিবকে এই নির্দেশ দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

এছাড়া রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু শিক্ষার্থী হতাহত হওয়ার ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ৭ দিনের মধ্যে সরকারকে এই কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পুড়ে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে ৫ কোটি টাকা এবং আহতদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে রুল জারি করা হয়েছে। আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের সব জনবহুল এলাকায় ত্রুটিপূর্ণ বিমান ও যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের ওপর রুল জারি করেছেন আদালত।

রিটের পক্ষে শুনানি করেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল এবং অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান, তানিম খান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির ও মো. ঈসা।

প্রসঙ্গত, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, ত্রুটিপূর্ণ যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন রোধ এবং রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান বিশ্বাস।

উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনা আহতদের চিকিৎসায় সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে বিমান বাহিনী প্রধান

শিশুদের শরীর পুড়ে গেলে জরুরি করণীয়: দ্রুত পদক্ষেপেই বাঁচতে পারে একটি জীবন

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। আহতদের সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাহিনীর সহযোগিতা চলবে বলে জানিয়েছেন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “তথ্য লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। কার কাছ থেকে লুকাব? সবাই আমাদের দেশের মানুষ। দুর্ঘটনার সব আপডেট আমরা আইএসপিআরের মাধ্যমে জনগণকে জানিয়ে দিচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “বিমান বাহিনী ইঞ্জিন বা প্রযুক্তি নিয়ে কোনো আপস করে না। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। গুজবে কান না দিয়ে সত্যিকারের তথ্যের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানাই।”

প্রসঙ্গত, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-সেভেন বিজেআই মডেলের একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। নিহতদের মধ্যে পাইলট ও এক শিক্ষিকা ছাড়া বাকিরা সবাই স্কুলের শিক্ষার্থী। আহত অবস্থায় অনেকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার শোক রেমিট্যান্সযো’দ্ধা দিবস-এর অনুষ্ঠান স্থগিত করল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়

শিশুদের শরীর পুড়ে গেলে জরুরি করণীয়: দ্রুত পদক্ষেপেই বাঁচতে পারে একটি জীবন

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি শিশুসহ অনেকের মর্মান্তিক মৃত্যু ও আহতের ঘটনায় সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই শোকাবহ পরিস্থিতির কারণে স্থগিত করা হয়েছে আগামী ২৩ জুলাই উদযাপিতব্য ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধা দিবস’-এর অনুষ্ঠান।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেফায়েত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২৩ জুলাইয়ের ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধা দিবস’ সংক্রান্ত সব অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন তারিখ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার জুলাই মাসের তিন দিনের গণজাগরণ অনুষ্ঠানমালাও স্থগিত করেছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ‘রেমিট্যান্সযোদ্ধা দিবস’। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং বহু আহত অবস্থায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

×