২০ জুলাই ২০২৪: কারফিউ ভেঙে চলে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

১৯ জুলাই ২০২৪ (শুক্রবার) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলির পর উত্তাল হয়ে ওঠে ছাত্র-জনতা। বিক্ষুব্ধ জনতা ও শিক্ষার্থীরা রাজধানীসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। এর জেরে পুরো বাংলাদেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে এবং রাজধানী ঢাকা রূপ নেয় যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরীতে।
১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করা হয়।
২০ জুলাই কারফিউর প্রথম সকালেই ঢাকার রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। গুটিকয়েক দোকান খোলা থাকলেও রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ছিল নিতান্তই হাতে গোনা। তবে কারফিউ উপেক্ষা করে রামপুরা, যাত্রাবাড়ি, বাড্ডা, শাহজাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গুলি বিনিময়ের খবর পাওয়া গেছে।
এসময় ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কজুড়ে সেনা সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়। একই রাতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গণভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও ১৪ দলের নেতাদের সাথে জরুরি বৈঠক হয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সরকারের তিন মন্ত্রীর কাছে তাদের ৮ দফা দাবি পেশ করেন। বৈঠক শেষে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক বলে মন্তব্য করলেও আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদের ডেকে নিয়ে ‘নাটক’ সাজানো হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, “রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নিয়ে আমাদের দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করানো হয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে, সেখানে কোনো আলোচনা হতে পারে না। শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানান, “আমরা ৮ দফা দাবি দিয়েছিলাম এবং শাটডাউন অব্যাহত রাখার ঘোষণাও ছিল। কিন্তু সেটি প্রচার করতে দেয়া হয়নি।”
এদিকে বিটিভি ভবন ও মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশনগুলো সচল হতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
কারফিউ চলমান থাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট বাতিল ও যাত্রী ভোগান্তি বেড়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার টানা দুই দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অভিযোগ করেছেন, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশ নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করছে এবং এ বিষয়ে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হচ্ছে।
এদিন বিএনপি-জামায়াতের অন্তত ৭০ জন নেতাকর্মী, যার মধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান ও রুহুল কবির রিজভী রয়েছেন, তাদের আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এদিকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।