
মিষ্টি মেয়ে কবরীর ৭৫তম জন্মদিন: কিংবদন্তি নায়িকার স্মৃতির ঝরাপাতা
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর মেয়ে মিনা পাল, যিনি সবার কাছে বাংলা সিনেমার ‘মিষ্টি মেয়ে’ সারাহ বেগম কবরী নামে পরিচিত। নাচের প্রতি অদম্য ভালোবাসা থেকেই মাত্র ১৩ বছর বয়সে মঞ্চে নৃত্যশিল্পী হিসেবে অভিষেক। এক বছর পর, মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৪ সালে ‘সুতরাং’ সিনেমার নায়িকা হয়ে প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান।
প্রথম ছবিতেই দর্শক হৃদয় জয় করে নেন কবরী। এরপর শুরু হয় সোনালি অধ্যায়। মিনা পাল থেকে হয়ে যান সারাহ বেগম কবরী— বাংলা চলচ্চিত্রে এক অনন্য নাম। আজ কিংবদন্তি এই নায়িকার ৭৫তম জন্মদিন।
১৯৭৫ সালে ফারুকের সঙ্গে ‘সুজন সখী’ সিনেমায় অভিনয় করে হয়ে ওঠেন বাংলা সিনেমার চিরসবুজ ‘মিষ্টি মেয়ে’। পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন কবরী। বাংলা চলচ্চিত্রে একমাত্র অভিনেত্রী হিসেবে পাঁচজন শীর্ষ নায়কের বিপরীতে অভিষেক ঘটেছে তাঁর— ফারুক, জাফর ইকবাল, আলমগীর, উজ্জ্বল ও সোহেল রানা।
কবরীর উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো: ‘সুতরাং’, ‘হীরামন’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সারেং বউ’, ‘দেবদাস’, ‘সুজন সখী’, ‘পারুলের সংসার’, ‘রংবাজ’, ‘বধূ বিদায়’, ‘আগন্তুক’, ‘বাহানা’ ও ‘তিতাস একটি নদীর নাম’।
অভিনয়ের বাইরে তিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারী অধিকারকর্মী ও সমাজসেবী। একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, ঋষিজ পদকসহ দেশে-বিদেশের নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননাও।
২০০৬ সালে ‘আয়না’ সিনেমা পরিচালনা করে নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কবরী। তাঁর আত্মজীবনী ‘স্মৃতিটুকু থাক’ ২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়, আর একই নামে সিনেমাও নির্মাণ করেছিলেন তিনি। তবে শেষ জীবনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নেন এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী।
কবরী নেই, তবুও তাঁর শত সিনেমা, লেখা আর অমর স্মৃতি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে। মিষ্টি মেয়ে নেই, তবে ‘স্মৃতিটুকু’ রয়ে গেছে— প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।