| ১৫ জুলাই ২০২৫
শিরোনাম:

কোটি কোটি টাকার প্রতারণা! আবাসনের স্বপ্নে ছদ্মবেশী ‘রন’-এর ফাঁদে সর্বস্বান্ত বহু পরিবার

কোটি কোটি টাকার প্রতারণা! আবাসনের স্বপ্নে ছদ্মবেশী ‘রন’-এর ফাঁদে সর্বস্বান্ত বহু পরিবার

ঘরের স্বপ্ন মানেই সারা জীবনের সঞ্চয়। সেই স্বপ্নকে পুঁজি করে যখন কোনো প্রতারক মানুষের জীবনের সমস্ত শ্রম-ঘামে জমানো টাকা লুটে নেয়, তখন কত পরিবার যে পথে বসে—তার হিসাব কে রাখে!
এখন দেশের আবাসন জগতে এমনই এক আলোচিত প্রতারকের নাম উঠে এসেছে—রেজা আল মুরাদ (রন)। একের পর এক কোম্পানির আড়ালে ছদ্মবেশে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী।

 

চাকরি জীবনের শুরুতেই দুর্নীতি আর শ্লীলতাহানি

অনুসন্ধান বলছে, রন প্রথমে ঢাকার প্লাটিনাম গ্রুপ-এ বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকুরি শুরু করেছিলেন। সেখানেই আর্থিক অনিয়ম আর নারী সহকর্মীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে তাকে বিতাড়িত হতে হয়।

এরপর রন যান অক্টাগন অ্যাসেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড-এ এজিএম পদে।
কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিন বিল্লাহ মাসুম আবাসন নিউজ২৪-কে বলেন—

রেজা আল মুরাদ কিছুদিন আমাদের এখানে কাজ করেছেন। কিন্তু আর্থিক দুর্নীতি আর চারিত্রিক সমস্যা থাকার কারণে তাকে বিদায় করতে হয়।

 

পরবর্তী পদক্ষেপে রন  স্বনামধন্য এ্যাম্পায়ার গ্রুপ-এ গিয়ে জিএম হিসেবে যোগ দেন।
গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জুয়েল রানা বলেন—

রনকে জিএম হিসেবে নিয়েছিলাম। কিছুদিনের মধ্যে সে আমাদের এক বিক্রয়কর্মীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি মামলার পর্যায় পর্যন্ত গড়ায়। পরে আর দেরি না করে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করি।

 

ভুয়া মানি রিসিটের ছক—অফিসের আড়ালে ব্যক্তিগত লুটপাট

ভুক্তভোগীদের সবচেয়ে বড় ক্ষোভ হলো রনের ভুয়া মানি রিসিটের ফাঁদ।
তিনি যখন যে কোম্পানিতে থাকতেন, তখন গ্রাহকদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সখ্যতা গড়ে তুলতেন। অফিসের বাইরে নিজেই বানানো ভুয়া রিসিট দিয়ে টাকা নিতেন, যা দেখতে হুবহু অফিসের আসল রিসিটের মতো!
যখন গ্রাহকরা সেই রিসিট নিয়ে অফিসে আসতেন, কোম্পানি জানাতো—
এমন কোনো রিসিট আমরা ইস্যু করিনি!

ফলে সাধারণ মানুষের টাকা গায়েব, অভিযোগের কোনো লিখিত প্রমাণ নেই—এভাবেই একের পর এক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েছে।

পরিচয় বদলিয়ে নতুন ফাঁদ—‘মেগা টাউন’ প্রকল্প

সব কোম্পানিতে অনিয়ম ধরা পড়লে রন লুকিয়ে নতুন কোম্পানিতে যুক্ত হতেন।
সর্বশেষ তিনি বন্ধ হয়ে যাওয়া মেগা বিল্ডার্স-এর এক সাবেক কর্মকর্তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুরু করেন ‘মেগা টাউন’ প্রকল্প। অভিযোগ আছে, প্রকল্পের নামে এক শতাংশ জমিও কোম্পানির নয়!
কিন্তু চোখধাঁধানো স্বপ্ন দেখিয়ে ভুয়া রিসিট আর কথার জোরে কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ কোম্পানি থেকেও তিনি চলে গেছে গত ১৩ মার্চ ২০২৫.

 

নারী সহকর্মী ও ক্লায়েন্টদের টার্গেট

ভুক্তভোগীদের ভাষ্য অনুযায়ী, রনের আরেকটি কৌশল ছিল সরলমনা নারী কর্মী বা ক্লায়েন্টকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফাঁসানো।
কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, তিনি এক ডজনেরও বেশি নারীকে বিয়ের ফাঁদে ফেলেছেন—এমনকি এক খ্রিস্টান নারীও তার ফাঁদ থেকে রেহাই পাননি।

রেজা আল মুরাদ (রন) বর সেজে খ্রিস্টান ধর্মের এক নারীকে বিয়ে করতেছে কাজী অফিসে কাবিননামায় স্বাক্ষর করতেছে।
খ্রিষ্টান ধর্মের এক নারীকে বিয়ের সময় তোলা ছবি। ছবি এবং ভিডিও সংগৃহীত

অফিসে প্রকাশ্যে জুতাপেটা!

রনের স্ত্রী একসময় তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অফিসেই প্রকাশ্যে জুতাপেটা করেন! পরে ‘মেগা টাউন’ প্রকল্পের অফিসেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
এই দৃশ্যের ভিডিও ফুটেজ আবাসন নিউজ২৪-এর কাছে সংরক্ষিত আছে।

 

নতুন ফাঁদ—‘কোম্পানি খুলে দেওয়ার’ নামে লোভ!

সাম্প্রতিক অভিযোগে উঠে এসেছে, রন শুধু ভুয়া প্রকল্প নয়, ‘কোম্পানি খুলে দেওয়ার’ নামেও ফাঁদ তৈরি করেছেন।
ভুক্তভোগী সেলিম আহমেদ অভিযোগ করেছেন,

রন পূর্বাচলে প্রকল্প করে দেবে বলে তার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। দীর্ঘদিনেও কোনো কাজ শুরু হয়নি—শুধু নানা অজুহাত!
এভাবেই নতুন নতুন গল্প বানিয়ে কারো কাছে বলেন, আপনাকে কোম্পানির মালিক বানিয়ে দেবো।
এতে কেউ হয়তো লোভে পড়ে বিনিয়োগ করে, পরে বুঝতে পারে সর্বস্ব গেছে।

 

গ্রামের বাড়ি নওগাঁতে

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারক রেজা আল মুরাদ (রন)-এর গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার নওগাঁ সদর উপজেলার নওগাঁ পৌরসভার ভাঙ্গাবারিয়া গ্রামে।

রনের বক্তব্য মিলল না

রনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিনিয়োগকারীদের জন্য মানবিক সতর্কবার্তা

শত শত পরিবার আজও তার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব। ভুক্তভোগীদের একটাই অনুরোধ—

এমন প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক—যাতে আর কেউ ঘর হারিয়ে পথে না বসে।

দুদকের নজরে হাসিনার ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুলের দান-অনুদান, এনবিআরকে নথি তলবের চিঠি

কোটি কোটি টাকার প্রতারণা! আবাসনের স্বপ্নে ছদ্মবেশী ‘রন’-এর ফাঁদে সর্বস্বান্ত বহু পরিবার

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারত আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও মেয়ে—সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল—এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানের মুখে।

 

দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জয় প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এবং পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশন যে বিপুল দান ও অনুদান পেয়েছে, তার হিসাব-নিকাশে জটিলতার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়ে সব নথি ও ব্যাংক লেনদেনের তথ্য দ্রুত সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

 

দুদকের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহার এবং ব্যাংকের সিএসআর তহবিল থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জব্দ করা প্রয়োজন।”

 

দুদক বলছে, রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ এসেছে। একইসঙ্গে, পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধেও রয়েছে অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ।

 

এ বিষয়ে সুষ্ঠু অনুসন্ধান করতে উপপরিচালক মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। দলে রয়েছেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মুর্তজা আলী সাগর, মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

 

উল্লেখ্য, গত মার্চে পুতুলের বিরুদ্ধে ৩৩ কোটি টাকার অনিয়ম ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের পরিচালক পদ ‘বাগিয়ে নেওয়া’র অভিযোগে দুদক দুইটি মামলা করেছে। এর আগেও পূর্বাচলে তথ্য গোপন করে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে জয় ও পুতুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

হাইকোর্টে স্থগিত টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট জালিয়াতি মামলা, আপিলের ঘোষণা দুদকের

কোটি কোটি টাকার প্রতারণা! আবাসনের স্বপ্নে ছদ্মবেশী ‘রন’-এর ফাঁদে সর্বস্বান্ত বহু পরিবার

শেখ রেহানার কন্যা ও ব্রিটিশ সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়ের করা ফ্ল্যাট জালিয়াতির মামলার কার্যক্রম হাইকোর্ট তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। তবে হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে শিগগিরই আপিল করবে দুদক।

 

গত ৮ জুলাই বিচারপতি মোহাম্মদ আলী ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ আসামি শাহ মো. খসরুজ্জামানের আবেদনের শুনানি শেষে মামলাটির ওপর রুল জারি করে স্থগিতাদেশ দেন।

দুদকের আইনজীবী এম এ আজিজ খান জানিয়েছেন, এই মামলার স্থগিতাদেশ বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতে আপিলের প্রস্তুতি চলছে।

 

প্রসঙ্গত, অভিযোগ আছে গুলশানের একটি প্লট নিয়ে ইস্টার্ন হাউজিংকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে একই ভবনে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। এ ঘটনায় দুদক গত ১৫ এপ্রিল টিউলিপের পাশাপাশি রাজউকের সাবেক দুই কর্মকর্তা শাহ খসরুজ্জামান ও সরদার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে।

মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছিল বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। এমন সময়ে আসামিপক্ষের এক চিঠিতে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের খবর জানতে পারে দুদক।

মহাখালীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের অবরোধ বন্ধ যান চলাচল

কোটি কোটি টাকার প্রতারণা! আবাসনের স্বপ্নে ছদ্মবেশী ‘রন’-এর ফাঁদে সর্বস্বান্ত বহু পরিবার

রাজধানীতে বাইরের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের অবরোধের কারণে ঢাকার মহাখালী রুটে ইনকামিং ও আউটগোয়িং যান চলাচল আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক গুলশান বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।

রোববার (১৩ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে বনানীর বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ শুরু করেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা। রাজধানীতে অবাধে চলাচলের অনুমতির দাবিতে তারা এই অবরোধ করেন।

ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের সার্জেন্ট আনিসুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে জানান, অবরোধের কারণে উত্তরা-মহাখালী রুটে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

তবে বিকল্প রুট ব্যবহার করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। গুলশান-২ থেকে গুলশান-১ হয়ে আমতলী, কিংবা গুলশান-১ হয়ে পুলিশ প্লাজা হয়ে ইনকামিং যান চলাচল চালানো হচ্ছে। এছাড়া আউটগোয়িং রুটে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। উত্তরা থেকে তেজগাঁও বা হাতিরঝিলের দিকেও এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা নেওয়া যাচ্ছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

×