| ১২ জুলাই ২০২৫
শিরোনাম:

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হ’ত্যা: ‘সমাজ জেগে উঠুন’—ডা. শফিকুর রহমান

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হ’ত্যা: ‘সমাজ জেগে উঠুন’—ডা. শফিকুর রহমান

ডা. শফিকুর রহমান : ছবি-সংগৃহীত

রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেয়া এক বার্তায় এ ঘটনার নিন্দা জানান।

তিনি লেখেন, ‘‘মিটফোর্ডের ঘটনা বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় জেনে সকল ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এ কোন যুগ, কোন সমাজ! প্রকাশ্যে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে শুধু চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় শত শত মানুষের সামনে এতটা নির্মমভাবে হত্যা করা হলো!’’

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে লজ্জা প্রকাশ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘‘হে মজলুম পরিবার, আমরা তোমাদের কাছে লজ্জিত। হে সোহাগ ভাই, তোমার এই পরিণতির আগে আমরা কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি—এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও লজ্জিত।’’

তিনি সবাইকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘হে সমাজ, জেগে উঠো! মানুষ হিসেবে বাঁচার প্রমাণ দাও। মনে রেখো—আজ তুমি চুপ থাকলে, কাল তোমার ওপরও বিপদ এলে পাশে কাউকে পাবে না। তাই ভয় ও সংকোচ দূরে রেখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে।’’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগকে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মরদেহের ওপরও বর্বরতা চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।

মিটফোর্ডে সোহাগ হ’ত্যা: জড়িত সবাই আইনের আওতায় আসবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হ’ত্যা: ‘সমাজ জেগে উঠুন’—ডা. শফিকুর রহমান

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী : ছবি-সংগৃহীত

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

শনিবার (১২ জুলাই) সকালে পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স ও ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন্স পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, “মিটফোর্ডের এ ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। একটি সভ্য সমাজে এমন বর্বরতা কোনোভাবেই আশা করা যায় না। দায়ীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, এই ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতরাতেও একজন ধরা পড়েছে। এর আগে র‌্যাব দুজনকে অস্ত্রসহ আটক করে এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের হাতেও দুজন গ্রেপ্তার হয়। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দলও অভিযানে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “বিচার প্রক্রিয়া কখনোই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কারণে বিলম্বিত হয় না। তারা কোনোভাবেই নির্লিপ্ত নয়। পুলিশ ও র‌্যাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।”

একইসঙ্গে তিনি চাঁদপুরের আরেকটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করে বলেন, সেখানেও জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আইন হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আইনের শাসনের প্রতি আস্থা রাখুন, অপরাধী যেই হোক, আইনের আওতায় আনা হবে।”

‘ডিসেম্বরে নির্বাচন ঠেকাতে ষড়যন্ত্র চলছে’—অভিযোগ বিএনপি নেতার

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হ’ত্যা: ‘সমাজ জেগে উঠুন’—ডা. শফিকুর রহমান

দেশে চলমান হত্যাকাণ্ড ও নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক।

শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফারুক বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডসহ নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এতে কান না দিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে তার কথা রাখার আহ্বান জানাই।’’

সম্প্রতি মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘ছাত্রদল ও যুবদল এই ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্ট অবস্থান জানিয়েছে, দায়ীদের বহিষ্কার করেছে। অথচ হারুন, বিপ্লবদের বিরুদ্ধে আমি যে মামলা করেছিলাম, তা নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তারা কোথায়, কেন গ্রেপ্তার হচ্ছে না—এটা জনগণকে জানাতে হবে।’’

ফারুক আরও বলেন, ‘‘মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। আওয়ামী লীগের সময়ে ব্লগার অভিজিৎ রায়কে ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হলেও তখন আওয়ামী লীগ কাউকে বহিষ্কার করেনি। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসন তারেক রহমান এই ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জড়িতদের আজীবন বহিষ্কার করেছেন।’’

তিনি দাবি করেন, তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে লন্ডনে হওয়া বৈঠক এবং ফেব্রুয়ারির নির্বাচনী প্রস্তুতিকে বানচাল করতে পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। ‘‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার যখন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন, তখনই এই হত্যাকাণ্ড ও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করা হলো,’’—বলেন ফারুক।

সবশেষে তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘যে কোনো ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা ও সংসদীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে আপনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন।’’

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীর হাতে ফিলিস্তিনি-মার্কিন যুবক নি’হত

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হ’ত্যা: ‘সমাজ জেগে উঠুন’—ডা. শফিকুর রহমান

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় এক ফিলিস্তিনি-মার্কিন যুবক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। নিহত ওই যুবকের নাম সাইফ আল-দিন কামেল আবদুল করিম মুসাল্লাত। তার বয়স বিশের কোঠায়।

ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, শুক্রবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় রামাল্লার উত্তরের সিনজিল শহরে বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হামলায় আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত মুসাল্লাত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের টাম্পার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি কিছুদিনের জন্য ফিলিস্তিনে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তার কাজিন ফাতমা মোহাম্মদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘‘তিনি একেবারেই নিরস্ত্র ছিলেন, অথচ নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’’

ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী, নিহতের পরিবারের উদ্ধৃতিতে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরাই তাকে হত্যা করেছে।

ফিলিস্তিনি এক চিকিৎসা কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, একই এলাকায় আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য দেয়নি।

এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়াও এসেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘পশ্চিম তীরে এক মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর খবর আমরা পেয়েছি। তবে নিহতের পরিবারের গোপনীয়তা রক্ষার্থে বিস্তারিত কিছু বলা হবে না।’’

এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, সিনজিল শহরে ইসরায়েলি নাগরিকদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার পর বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে কয়েকজন ইসরায়েলিও আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ‘অপ্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহার করেছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

২০২৩ সালে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের হামলা ও সহিংসতা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

এর আগেও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি-মার্কিন নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ, কিশোর ওমর মোহাম্মদ রাবেয়া এবং মানবাধিকারকর্মী আয়সেনুর ইজগি আয়গিও পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ২০২৩ সালে জানিয়েছিল, পশ্চিম তীরসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি ও অবৈধ বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহার করা উচিত। তবে ইসরায়েল নিজেদের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় অধিকার দেখিয়ে সেই অবস্থান মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।

এই হত্যাকাণ্ড পশ্চিম তীরের দখল, দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্রকে আরও একবার বিশ্বমঞ্চে সামনে এনেছে।

×