| ২৪ জুন ২০২৫
শিরোনাম:

ফ্ল্যাট বিক্রিতে ধস, ছাঁটাইয়ের মুখে নির্মাণ শ্রমিক: চরম সংকটে দেশের আবাসন খাত

ফ্ল্যাট বিক্রিতে ধস, ছাঁটাইয়ের মুখে নির্মাণ শ্রমিক: চরম সংকটে দেশের আবাসন খাত

রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরের আবাসন ও নির্মাণ খাত এখন এক নজিরবিহীন সংকটকাল অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিনিয়োগ ও ক্রয়চাহিদায় বড় ধস নামায় একের পর এক প্রকল্প থমকে গেছে, বন্ধ হচ্ছে বুকিং, আর নতুন প্রকল্প নিতে পারছেন না অধিকাংশ ডেভেলপার। ফ্ল্যাট বিক্রি অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় অনেকে বাধ্য হচ্ছেন নির্মাণ ব্যয়ের নিচে ইউনিট বিক্রি করতে। ফলে দেখা দিয়েছে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা, আর সরাসরি ও পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবিকায় পড়েছে চাপ।

 

বিক্রির হার কমেছে ৩০-৫০ শতাংশ

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পরিচালক আইয়ুব আলী আবাসন নিউজ২৪-কে জানান, ‘‘গত কয়েক মাসে ফ্ল্যাট বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে এসেছে। বড় কোম্পানিগুলো কোনওরকমে টিকে থাকলেও মাঝারি ও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী বেতন, অফিস ভাড়া ও ব্যাংক কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে নির্মাণ ব্যয়ের নিচে গিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রি করছেন শুধু ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে।’’

ক্রিডেন্স হাউজিং-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিল্লুল করিম বলেন ,‘‘বিক্রিতে পতনের হার আমাদের প্রতিষ্ঠানে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। এর পাশাপাশি “ড্যাপ” বাস্তবায়ন আমাদের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। জমির অনুমোদন, ভবন নকশা—সবকিছুই দুরূহ হয়ে পড়েছে।’’

বিলাসবহুল ইউনিটে চাহিদার বড় পতন

বিটিআই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ আর খান বলেন, ‘‘উচ্চমূল্যের ইউনিটগুলোতে চাহিদা মারাত্মকভাবে কমেছে। মাঝারি দামের ফ্ল্যাট কিছুটা চললেও সেটাও নিরাপত্তাহীনতার কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’’

ড্যাপ বাস্তবায়নের প্রভাব: উচ্চতা-ঘনত্ব সীমাবদ্ধতায় নতুন প্রকল্প থেমে গেছে

২০২২-২০৩৫ মেয়াদের ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়নের পর থেকেই আবাসন প্রকল্প গ্রহণে সীমাহীন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। পূর্বে ১০তলা পর্যন্ত অনুমোদন মিলত যে এলাকায়, সেখানে এখন অনুমোদন মিলছে মাত্র ৫ থেকে ৬ তলার। এতে জমির মালিকেরা আর ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘‘ড্যাপ বাস্তবায়নে উচ্চতা সীমা এতটাই রেসট্রিকটিভ হয়েছে যে জমির ব্যবহারযোগ্যতা কমে গেছে। আমরা ২০০৮ সালের মতো ফ্লোর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে বাজারে গতি আসে।’’

নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে, বিক্রি কমে যাচ্ছে

গত এক বছরে নির্মাণ সামগ্রীর দাম ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে। রড, সিমেন্ট, ইট, লিফট, থাই অ্যালুমিনিয়াম, টাইলসসহ আবাসন-নির্ভর ২০০টিরও বেশি শিল্প আজ ধসের মুখে। রডের চাহিদা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

রিহ্যাবের মতে, এই খাতে সরাসরি যুক্ত ৪০ লাখ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ২ কোটি মানুষ। সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে পুরো অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

 

কালোটাকা বিনিয়োগে কর বাড়লেও সুযোগ থাকছে

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখলেও করহার অনেক বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন:

গুলশান/বনানী এলাকায় ২০০ বর্গমিটার ফ্ল্যাটে প্রতি বর্গফুটে কর হবে ২,০০০ টাকা (বাড়তি ২৫৯%)

ছোট ফ্ল্যাটে কর ৩৮৪% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে

এনবিআর বলছে, এটি সুযোগ নয়, বরং ‘‘কর পরিশোধের বিনিময়ে আইনি নিরাপত্তা’’

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার মূলত রাজস্ব আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করছে এবং একইসঙ্গে আবাসন খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে।

 

ফ্ল্যাট বিক্রির নিম্নগামী প্রবণতা: ২০২৩-২৫

২০২৩: মাথাপিছু আয় বাড়লেও বাজার স্থবির

২০২৪: সামান্য উন্নতি, কিন্তু গতি ফেরেনি

২০২৫: রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রম অসন্তোষ, বৈদেশিক চাপ—সব মিলিয়ে ভয়াবহ মন্দা

 

নিবন্ধন কর কমানোর স্বস্তি

২০২৫-২৬ বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনে উৎসে কর হ্রাস করা হয়েছে:

ঢাকা-চট্টগ্রাম: ৮% → ৬%

অন্যান্য সিটি: ৬% → ৪%

পৌরসভা-ইউনিয়ন: ৪% → ৩%

ফ্ল্যাট কেনাবেচায় খরচ কমে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের।

আবাসন খাতের এই সংকট আর একা একটি খাতের সংকট নয়, বরং জাতীয় অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভে চরম ঝুঁকি। সময়মতো বাস্তবভিত্তিক ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন, আয় এবং কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।

অবিলম্বে জরুরি নীতিগত হস্তক্ষেপ, ড্যাপ সংশোধন ও বাস্তবমুখী করনীতি ছাড়া এই খাতের বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়।

ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে সম্মত—ট্রাম্প

ফ্ল্যাট বিক্রিতে ধস, ছাঁটাইয়ের মুখে নির্মাণ শ্রমিক: চরম সংকটে দেশের আবাসন খাত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দুই বৈরী শক্তি—ইসরায়েল ও ইরান—সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

 

ট্রাম্প বলেন, “এই যুদ্ধবিরতি শুধু দুই দেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের শান্তির জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।”

 

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘোষণাকে বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে এক ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল কিংবা ইরানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি।

 

বিশ্বজুড়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই চুক্তি বাস্তবায়ন হয়, তবে যুদ্ধাহত লাখো মানুষের জন্য এটা হবে এক স্বস্তির খবর। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে বসবাস করা সাধারণ মানুষের মনে ফিরতে পারে নতুন আশার আলো।

কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলা: সৌদি আরবের তীব্র নিন্দা

ফ্ল্যাট বিক্রিতে ধস, ছাঁটাইয়ের মুখে নির্মাণ শ্রমিক: চরম সংকটে দেশের আবাসন খাত

কাতার অবস্থিত মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় সৌদি আরব তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই হামলাকে অযৌক্তিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ধরনের আগ্রাসন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর কোনো ন্যায়সঙ্গত ব্যাখ্যা থাকতে পারে না।সৌদি আরব কাতারের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেছে, প্রয়োজনে যেকোনো সহযোগিতা ও সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত।

 

রিয়াদ আরও উল্লেখ করে, মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

আকাশসীমা বন্ধ কাতারসহ ৪ দেশে, ঢাকা থেকে সব ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা

ফ্ল্যাট বিক্রিতে ধস, ছাঁটাইয়ের মুখে নির্মাণ শ্রমিক: চরম সংকটে দেশের আবাসন খাত

বাংলাদেশ বিমান, ছবিঃসংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলার ঘটনার পর ইরান থেকে আসতে পারে আরও পাল্টা হামলা—এই আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বেশ কয়েকটি দেশ। এরই প্রেক্ষিতে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই ও আবুধাবি), কুয়েত এবং বাহরাইন সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে ঢাকা থেকে এসব দেশের সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলেছে প্রবাসী কর্মী, শিক্ষার্থী ও ভ্রমণকারীদের ওপর।

ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা মধ্যরাতে

সোমবার (২৩ জুন) মধ্যরাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত কাতার, দুবাই, আবুধাবি, কুয়েত ও বাহরাইনগামী সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় অবস্থিত এয়ারলাইন্স অফিসগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ও উদ্বেগ বেড়েছে। যাত্রীরা জরুরি প্রয়োজনে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেও, হঠাৎ ফ্লাইট বাতিলে পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।

বিমান সংস্থাগুলোর ঘোষণা

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, ফ্লাইদুবাই, কুয়েত এয়ারওয়েজ ও গালফ এয়ার—সবগুলো বিমান সংস্থাই তাদের ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। যাত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে নির্ধারিত যাত্রার আগে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের হটলাইন বা অফিসের মাধ্যমে সর্বশেষ তথ্য জেনে নিতে।

যুদ্ধ আতঙ্কেই এ সিদ্ধান্ত

চার দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নাগরিক, বাসিন্দা ও ভ্রমণকারীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পক্ষ থেকে অনুমতি পাওয়া গেলে ফ্লাইট চালু করা হবে। তখন যাত্রীদের তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।

×