নীরব ভূমিকায় উপজেলা প্রশাসন?
টেকনাফে খালের জমি ভরাট করে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ

টেকনাফ পৌর শহরে খালের জমি ভরাট করে নির্মাণাধীন স্থাপনা—নীরব ভূমিকায় উপজেলা প্রশাসন
কক্সবাজারের টেকনাফ পৌর শহরে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা তিন ভাগে বিভক্ত নাফ নদীর সাথে লাগোয়া খালগুলো দিনের পর দিন নালায় পরিণত হচ্ছে। এক সময় এই খালগুলোতে মাছ আহরণ করে অনেক হতদরিদ্র মানুষের সংসার চলত। সময়ের ব্যবধানে আজ এসব খালের জমি পাহাড়ি পানির ঢলের সাথে মাটি এসে ও কিছু অসাধু মানুষের দ্বারা ভরাট হয়ে নালায় পরিণত হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হওয়ার পথে সাধারণ মানুষের আয়ের উৎস। এমনকি বর্ষাকালে ভারী বর্ষণে পাহাড়ি পানির ঢল খাল থেকে নদীতে নামতে না পেরে বন্যার আশঙ্কা ও দেখা দিচ্ছে।
এদিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এই খালের জমিগুলো ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে। তবে এত এত স্থাপনা নির্মাণ হয়ে খালের জমিগুলো নালায় পরিণত হলেও নজর পড়েনি স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনের। ফলে বর্ষা মৌসুম আসলেই এই খালের জমির পাশে বসবাসরত মানুষের দুর্ভোগ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এছাড়া বন্যার ভয়ে দিন কাটছে খালের আশেপাশে বসবাসরত স্থানীয় মানুষদের।
এসব বিষয়ে স্থানীয় সচেতন নাগরিক রফিকুল ইসলামের কাজ থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, গ্রীস্মের পর যখন বর্ষাকালে পাহাড় থেকে পানির ঢল নামে তখন পানির সাথে আসা মাটি খালগুলোতে নামে। যার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে অযত্নে অবহেলায় এই খালগুলো পড়ে থাকায় মাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে পানিগুলো নদীতে নামতে না পেরে আশেপাশে বিভিন্ন মানুষের বসতবাড়িতে ঢুকে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এমনকি আরো দেখা গেছে কিছু কিছু মানুষ খালের জমি দখল করে বিভিন্ন রকমের দালান কোঠাসহ নানান স্থাপনা নির্মাণ করেছে। তাছাড়া হাট-বাজারসহ বিভিন্ন মানুষের ঘর-বাড়ির ময়লা আবর্জনা খালে ফেলেও খালগুলো ভরাট করে রেখেছে। ফলে বৃষ্টির দিনে বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে না পেরে আশেপাশের বসবাসরত মানুষের বসত ভিটায় বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
তবে যদি সরকার কয়েক বছর পর পর এসব খালগুলো খনন করে বা পরিষ্কার করে তাহলে স্থানীয়দের এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হত না। পাশাপাশি এসব অসাধু ব্যক্তিরাও খালের জমি দখল করার দুঃসাহস করতেন না।
খালের জমি ভরাট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অসাধু ব্যক্তিদের দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বিশেষ করে খাল খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে খাল খনন করছে। তবে বিষয়টি সরেজমিনে দেখে যদি খুবই জরুরি মনে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর একটা চিঠি দিতে পারি। যদি স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে পরিষ্কার করা যায় তাহলে আমি এর আগেও বিভিন্ন উপজেলাতে খাল পরিষ্কার করেছি। আর টেকনাফে প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন খালগুলো পরিষ্কারের ব্যবস্থা নিবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকনাফ পিওর শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, স্থানীয় লোকজন বা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবরে লিখিত কোনো আবেদন পেলে পরবর্তীতে খালের জায়গাগুলো সরজমিনে পরিদর্শন করে যে জায়গায় খাল খনন করা বা পরিষ্কার করা দরকার হয়। মন্ত্রণালয় বারবার জানিয়ে একটা প্রকল্প হাতে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।