দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় ফেলে আগামী দেড় মাসের মধ্যেই যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজধানীতে এক ঐতিহাসিক জনসমাগমের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, যেখানে প্রায় ২০ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম ঘটানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত এই খবর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার জন্ম দিয়েছে।
বিএনপি এবং লন্ডনস্থ ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, তারেক রহমান দেশে ফিরেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সরাসরি নেতৃত্ব দেবেন। তার আগমনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে
নেতৃত্বের প্রত্যাবর্তনে দেশজুড়ে উচ্ছ্বাস
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অতি স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই দেশে ফিরবেন। সমগ্র বাংলাদেশ এখন তার আগমনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে নিজে মাঠে থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন এবং তার নেতৃত্বে আজ সমগ্র দেশ ঐক্যবদ্ধ।
লন্ডন সফররত দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তিনি যখন খুশি দেশে ফিরতে পারেন। সময়মতো তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং অবশ্যই দেশে ফিরে আসবেন।
ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর বাড়তি উদ্দীপনা
বিভিন্ন সূত্রে খবর, লন্ডনে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের ফলপ্রসূ বৈঠকের পর সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিশেষভাবে উচ্ছ্বসিত। এই বৈঠকের পর থেকেই তাদের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে, তিনি আগামী ৫ আগস্টের আগেই দেশে ফিরতে পারেন। কোনো কারণে বিলম্ব হলেও, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনি ডামাডোলের এই উত্তাল সময়েই তিনি প্রিয় মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করবেন। সেদিন তাকে স্বাগত জানাতে ঢাকা এক জনসমুদ্রে পরিণত হতে পারে, যেখানে সারা দেশ থেকে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নিয়ে সমবেত হবেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পর বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তারেক রহমানের আগমন সারাদেশে এক বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক দূরদর্শিতার স্বাক্ষর ও ষড়যন্ত্রের অবসান
১৩ জুন লন্ডন বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন সহ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, দেশের একমাত্র নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যথাযথভাবে বোঝানোর মাধ্যমে তারেক রহমান তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার স্বাক্ষর রেখেছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই সাফল্যের জন্য তিনি দেশে-বিদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসায় সিক্ত হচ্ছেন। লন্ডন বৈঠক সফল হওয়ায় গণ অভ্যুত্থানবিরোধী সব অপশক্তি এবং নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তাদের চরম পরাজয় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে, ডিএসসিসির মেয়র পদে শপথ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটির অবসান হয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে, এই বৈঠকের পর রাজনৈতিক সংকট অনেকটাই কেটে গেছে এবং সমগ্র দেশ যেন নির্বাচনি ট্রেনের দিকে এগিয়ে চলেছে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, হাতে সময় মাত্র পৌনে আট মাস। জনগণের ভোটে এক স্মরণকালের ঐতিহাসিক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফেরায় নেই কোনো বাধা, স্বস্তিতে জনগণ
‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা সহজ হবে কি না’—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, তাঁর (তারেক রহমান) তো দেশে ফিরতে কোনো অসুবিধা নেই। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, যে কোনো সময় ইচ্ছা করলেই দেশে ফিরতে পারেন। তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকের মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে সব অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। এই লন্ডন বৈঠক যেন ষড়যন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক মেরেছে, ফলে জনমনে স্বস্তি এসেছে। অন্যদিকে, ষড়যন্ত্রকারীরা চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। বিশেষ করে, নির্বাচনের মনোনয়ন, দল গোছানোসহ অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো বাস্তবায়নে তারেক রহমানের কোনো বিকল্প নেই বলে তারা মনে করেন। তাদের প্রত্যাশা, তারেক রহমান ৫ আগস্টের আগেই ফিরছেন।
এর আগে, তারেক রহমানের দ্রুত দেশে ফেরার কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছিলেন, "তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন। তিনি শিগগিরই ফিরছেন।তবে বিএনপি মহাসচিব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাননি।
একই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, উনি (তারেক রহমান) শিগগিরই ফিরবেন, ইনশাল্লাহ। তবে দিন-তারিখ এখনো বলতে পারব না।
মামলার জট শেষ, পথ সুগম
গত বুধবার (১২ জুন) সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সারের একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। তিনি এক পোস্টে ইঙ্গিত দেন যে, '৩৬ জুলাই-এর আগেই তিনি লন্ডন থেকে ফিরছেন।' বিগত ওয়ান ইলেভেন ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৮৭টি মামলার মধ্যে অনেক মামলাই বাতিল ও খারিজ হয়েছে। বাকিগুলো থেকেও তিনি খালাস ও জামিন লাভ করেছেন। তার আইনজীবীরা আগেই জানিয়েছিলেন, এর ফলে তার দেশে ফেরায় আর কোনো বাধা নেই।