
যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সাবেক এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাজ্যে চলমান চার দিনের সফরের মধ্যেই এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিক গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস জানান, তিনি টিউলিপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না, কারণ এটি একটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তিনি চান না যে কোনোভাবে চলমান তদন্ত বা বিচারিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়ুক। তার ভাষায়, আইন যেন নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যেতে পারে, সেটিই সবচেয়ে জরুরি।
ড. ইউনূস আরও বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন। এ বিষয়ে তিনি দুদকের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন। আদালতই ঠিক করবে, অভিযোগে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে কি না, এবং মামলা চলবে কি না।
যদি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের কোনো অপরাধে দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার প্রত্যর্পণ চাওয়া হতে পারে কি না—এমন প্রশ্নে ড. ইউনূস বলেন, যদি সেটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হয়, তবে তা অবশ্যই সম্ভব।
ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে এক বিবৃতিতে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এবং ড. ইউনূস সেই প্রতিহিংসার কেন্দ্রে রয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করে, ঢাকার একটি ভুয়া ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছে, যেখানে তিনি কখনোই থাকেননি।
তিনি বলেন, একজন ব্রিটিশ নাগরিক ও সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি আশা করেন, ইউনূস সংবাদমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপবাদ দেওয়া বন্ধ করবেন এবং বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন থাকতে দিবেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নৈতিক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করেন। সেই প্রতিবেদনে কোনো অনিয়মের প্রমাণ মেলেনি বলা হলেও, আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে সম্ভাব্য সুনামের ক্ষতির ঝুঁকি আছে বলে সতর্ক করা হয়।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, গত এক যুগে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে, যার একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার ব্রিটিশ আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক দুর্নীতি সংস্থার সহায়তায় তদন্ত চালাচ্ছে। ড. ইউনূস জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য সরকার এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে এবং আন্তর্জাতিক দুর্নীতি সমন্বয় কেন্দ্রও সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করছে।
তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে ড. ইউনূসের কোনো বৈঠক হয়নি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটি এক ধরনের সুযোগ হারানোর ঘটনা। তিনি হতাশ নাকি স্টারমার ব্যস্ত ছিলেন, তা নিশ্চিত নন।