গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরপরই দেশে নতুন সরকারের অধীনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান জোরদার করে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার নজরে এসেছে সামরিক বাহিনীর সাবেক ১০ জন প্রভাবশালী কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুস গ্রহণ, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থপাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ এবং বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
🔹 সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ:
২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনকারী আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বাড়ি কেনা ও ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাকারিয়া।
🔹 বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান শেখ আব্দুল হান্নান:
২০২১-২০২৪ পর্যন্ত বিমানবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় ও ঘুস গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। তার এবং স্ত্রীর কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে দুদক।
🔹 মেজর জেনারেল টি এম জোবায়ের (সাবেক এনএসআই প্রধান):
ঘুস, ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পদ দখল এবং লন্ডনে অর্থপাচারের অভিযোগে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
🔹 রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান:
দুর্নীতির মাধ্যমে পরিবারসহ বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে দুদক।
🔹 মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজী (সাবেক সামরিক সচিব):
যশোরে জমি দখল ও পার্ক নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন।
🔹 ডিজিএফআই’র সাবেক প্রধান হামিদুল হক:
সিলেট এরিয়া কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হামিদুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।
🔹 এসএসএফের সাবেক ডিজি মুজিবুর রহমান:
তার ও স্ত্রীর ১৬টি ব্যাংক হিসাব এবং ফ্ল্যাট জব্দ করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।
🔹 লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী:
ফেনীর সাবেক এমপি ও মালয়েশিয়ায় দুর্নীতির মামলার মুখে। তার বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে।
🔹 মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান:
র্যাব, এনএসআই ও এনটিএমসির সাবেক কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে ৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ৩৪২ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে দু’টি মামলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে।
🔹 বিজিবির সাবেক ডিজি সাফিনুল ইসলাম:
অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার সম্পদ খতিয়ে দেখছে দুদক।
দুদকের বক্তব্য:
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে এবং যথাযথ তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুর্নীতির অভিযোগে দেশের সামরিক বাহিনীর সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন নজিরবিহীন তদন্ত দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। নতুন সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান যে সত্যিই কার্যকর হচ্ছে, তা প্রমাণ করছে এই অভিযান। নাগরিক সমাজ এখন অপেক্ষা করছে, আইনের শাসন কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়।