মার্কিন রাজনীতি ও প্রযুক্তি দুনিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে এক বিতর্কিত পোস্ট, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টিনের গোপন নথিতে ট্রাম্পের নাম রয়েছে—এমন দাবি করে মাস্ক এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ একটি পোস্ট করেছিলেন, যা মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ডিলিট করে ফেলেন তিনি।
মাস্কের পোস্টে যা ছিল
গত ৫ জুন বৃহস্পতিবার, এক্স-এ দেওয়া সেই পোস্টে মাস্ক লেখেন, এপস্টিন সংক্রান্ত ফাইলগুলোতে ট্রাম্পের নাম রয়েছে। এ কারণেই সেগুলো এখনও পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়নি। সত্য একদিন না একদিন সামনে আসবেই। পোস্টটির ভাষা ছিল ইঙ্গিতপূর্ণ, এবং কিছু অংশে হুমকিসুলভও। একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, পোস্টটি সরাসরি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে মাস্কের এক কৌশলগত বার্তা ছিল।
পোস্ট ডিলিটের পর নতুন প্রশ্ন
৭ জুন শনিবার দুপুরে পোস্টটি ডিলিট করেন মাস্ক। তবে কেন তিনি এটি সরিয়ে নিলেন, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। এই নীরবতাই নতুন করে জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক অঙ্গনে। কেউ বলছেন, এটি ছিল চাপের মুখে পিছু হটা, আবার কেউ বলছেন, মাস্ক সম্পর্ক উন্নয়নের আশায় ধাপে ধাপে এগোচ্ছেন।
এপস্টিন-ট্রাম্প সম্পর্ক: পুরনো গুঞ্জন, নতুন আলোচনা
জেফ্রি এপস্টিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে আগেও বহুবার বিতর্ক উঠেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এপস্টিনের ব্যক্তিগত বিমান ‘লোলিটা এক্সপ্রেস’-এ ট্রাম্প একাধিকবার ভ্রমণ করেছেন। এমনকি ভার্জিনিয়া জিফ্রে নামে এক ভুক্তভোগীর মামলায় ট্রাম্পের নামও ঘুরেফিরে এসেছে। সেই তালিকায় রয়েছেন বিল ক্লিন্টন, স্টিফেন হকিং, মাইকেল জ্যাকসনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বরাও।
ঘনিষ্ঠতা থেকে বিভক্তি: মাস্ক-ট্রাম্প সম্পর্কের রূপান্তর
দীর্ঘদিন ধরেই ইলন মাস্ক ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হতো। কিন্তু সেই চিত্র পাল্টে যাচ্ছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায়। গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, ট্রাম্পকে ইমপিচ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি ইলনের আচরণে হতাশ। এখন বুঝতে পারছি না আমাদের সম্পর্ক আগের মতো থাকবে কি না।”
রাজনৈতিক কৌশল না ব্যক্তিগত অবস্থান?
মাস্কের বিতর্কিত পোস্ট এবং পরবর্তী ডিলিট—এই দুইয়ের সমন্বয় ঘিরে মার্কিন রাজনীতিতে চলছে তুমুল আলোচনা। কেউ মনে করছেন, মাস্ক কৌশলগতভাবে নিজেকে বিতর্ক থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকেই মনে করেন, এটি তার এক সুপরিকল্পিত প্রচারণা কৌশলের অংশ, যার মাধ্যমে তিনি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে ভূমিকা রাখতে চাইছেন।