প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর কড়া সুরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে মোদি বলেন, “দেশের কৃষক, দুগ্ধ খাত ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা কোনো আপস করবো না, প্রয়োজন হলে চরম মূল্যও দিতে প্রস্তুত আছি।”
ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্ত এবং ভারতের উদ্বেগঃ
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যা আগের ২৫ শতাংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোট ৫০ শতাংশে পৌঁছাবে। এটি আমদানি শুল্কের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো বাণিজ্য অংশীদারের ওপর আরোপিত অন্যতম সর্বোচ্চ হার।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে “ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার শাস্তিস্বরূপ ব্যবস্থা” বলেই দাবি করেছে হোয়াইট হাউজ। এই শুল্ক কার্যকর হবে ২৮ আগস্ট থেকে।
মোদির বার্তা: জাতীয় স্বার্থে অটল থাকা হবে
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, আমাদের কৃষকদের কল্যাণই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ভারত কখনোই বিদেশি চাপের কাছে মাথানত করবে না। আমরা নিজেদের স্বার্থে যা কিছু করা দরকার, তাই করবো। যদিও তিনি সরাসরি ট্রাম্প বা ব্যর্থ বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে মন্তব্য করেননি, তবে তার বার্তা ছিল স্পষ্ট—ভারত আত্মমর্যাদার প্রশ্নে আপস করবে না।
কূটনৈতিক অচলাবস্থা ও সম্ভাব্য মিত্র পরিবর্তনঃ
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাঁচ দফা বাণিজ্য আলোচনা ইতিমধ্যেই ভেস্তে গেছে। মূল বাধা ছিল ভারতের কৃষি ও দুগ্ধ খাত উন্মুক্ত করা এবং রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ইস্যু। এই পরিস্থিতিতে ভারত এখন বিকল্প কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিকেও তাকাতে শুরু করেছে।
মোদি আগামী মাসে চীন সফরে যাবেন, যা সাত বছরের মধ্যে তার প্রথম চীন সফর। এই সফরকে বিশ্লেষকরা সম্ভাব্য মিত্রতান্ত্রিক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াঃ
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, তিনি এই শুল্ক মোকাবিলায় বিকাশমান অর্থনীতির জোট ‘ব্রিকস’-এর সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন। তিনি মোদিকে ফোন করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলবেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।
ভারতের অবস্থানঃ
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই শুল্ক বৃদ্ধিকে “চরম দুর্ভাগ্যজনক” বলে আখ্যায়িত করেছে এবং জানিয়েছে, “জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেবে ভারত।” পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা দাম্মু রবি বলেন, “এই সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি সাময়িক সমস্যা, আমরা নিশ্চিত যে বিশ্ব এর সমাধান খুঁজে পাবে।”