ফরিদপুরের নগরকান্দায় চাঁদাবাজি ও প্রকাশ্যে হত্যার হুমকির অভিযোগে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) গোলাম হায়দারসহ চারজনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। মঙ্গলবার (৩ জুন) গভীর রাতে উপজেলার কোদালিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, মেজর হায়দারের আচরণ দীর্ঘদিন ধরেই অশান্তির কারণ হয়ে উঠেছিল। কখনো উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা দাবি, কখনো আবার নিরীহ মানুষদের হুমকি—এসব নিয়ে এলাকায় চাপা উত্তেজনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে।
নগরকান্দা থানার ওসি আমিরুল ইসলাম জানান, “চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির একাধিক অভিযোগ ছিল মেজর হায়দারের বিরুদ্ধে। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফরহাদ হোসেনসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
ঘটনার সূত্রপাত স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজু মোল্লার এক অভিযোগ থেকে। রাজু জানান, ইউনিয়নের একটি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবি করেন মেজর হায়দার। রাজু তাতে রাজি না হওয়ায় গত ১ জুন প্রকাশ্যে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
রাজু থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে ওই রাতেই যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। তবে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়। অভিযানের সময় ফরহাদ হোসেন স্থানীয় মসজিদের মাইক ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে দেন—“মেজরের বাড়িতে ডাকাত পড়েছে!” এতে আশপাশের মানুষজন ভয় পেয়ে ছুটে আসেন।
তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা সাইরেন ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দেন, এটি ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব। কোনো ডাকাতি হয়নি। পরিস্থিতি শান্ত হলে এলাকাবাসীর সহায়তায় ফরহাদসহ তিনজনকে ঘটনাস্থল থেকেই আটক করা হয়। পরে মেজর হায়দারকেও নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, মেজর হায়দার নিজেকে ন্যাশনাল কনজারভেটিভ পার্টি (এনসিপি)-এর প্রতিনিধি বলে পরিচয় দিতেন এবং ফরিদপুর-২ আসনে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে প্রচার করতেন। তিনি ‘সচেতন সমাজ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারেও এলাকায় পোস্টার লাগিয়েছিলেন।
নগরকান্দা থানার ওসি বলেন, “রাজু মোল্লার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মঙ্গলবার সকালেই তাদের আদালতে পাঠানো হয়।”
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও কিছু গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রয়োজন হলে তাদের রিমান্ডে নেওয়ার প্রক্রিয়াও চলবে।