গত বছরের জুলাই মাসে গণ অভ্যুত্থানে আহত তরুণদের মধ্যে ভয়াবহ মানসিক সংকট দেখা যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আহতদের মধ্যে ৬৪.১ শতাংশ পিটিএসডি (PTSD) এবং ৮২.৫ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগছেন। অবস্থা এতটাই গুরুতর যে, গবেষকরা তাদের মানসিক পরিস্থিতিকে রুয়ান্ডার গণহত্যার সার্ভাইভারদের চেয়েও ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, বিষণ্নতার হার রুয়ান্ডার সার্ভাইভারদের চেয়ে ১.৮ গুণ বেশি, আর পিটিএসডি আক্রান্তের হারও প্রায় দেড় গুণ বেশি। এই গবেষণাটি সম্প্রতি পিয়ার রিভিউড মেডিক্যাল জার্নাল কিউরিয়াসে প্রকাশিত হয়।
গবেষণার বিবরণ:
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় অংশ নেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) এবং পাবনা মানসিক হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
তাদের গবেষণায় ২১৭ জন আহত ব্যক্তির মানসিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়, যাদের মধ্যে ৯৭.২% ছিলেন পুরুষ, এবং ৩৮.৭% শিক্ষার্থী। বেশির ভাগের বয়স ২০-২৯ বছর। আহতদের মধ্যে ৮৯.৪% গুলিবিদ্ধ ছিলেন।
উদ্বেগজনক ফলাফল:
- ৮২.৫% তরুণ বিষণ্নতায় আক্রান্ত
- ৬৪.১% তরুণ পিটিএসডিতে ভুগছেন
- ৯৯.৩% পিটিএসডি আক্রান্তই বিষণ্নতায়ও আক্রান্ত
- ৭৭.১% ছিলেন উভয় ব্যাধিতে আক্রান্ত
গ্রামীণ ও শহরভিত্তিক পার্থক্য:
গবেষণায় উঠে এসেছে, গ্রামীণ অংশগ্রহণকারীদের মানসিক অবস্থা শহরবাসীর তুলনায় খারাপ। তারা মানসিক সেবা ও সামাজিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সমস্যাটি আরও গভীর হয়েছে।
সমস্যার মূল কারণ:
গবেষণাটি মনে করে, মানসিক সমস্যার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- প্রাণঘাতী আঘাত
- স্থায়ী শারীরিক ক্ষতি
- দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা
- সহযোদ্ধাদের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করা
- মানসিক প্রস্তুতির অভাব
গবেষকদের পরামর্শ:
গবেষকরা মনে করেন, এখনই জাতীয় পর্যায়ে একটি মানসিক স্বাস্থ্য পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করা জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজন:
- আহতদের একটি কেন্দ্রীয় নিবন্ধন ব্যবস্থা
- সচেতনতামূলক প্রচারণা
- দীর্ঘমেয়াদি তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা
- সংস্কৃতিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য হস্তক্ষেপ পরিকল্পনা
আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ছে:
গবেষক দলের প্রধান, ডা. মোহাম্মদ শামসুল আহসান, বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি বিষণ্নতায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। রোগীরা বেঁচে থাকা আর না থাকার মাঝে পার্থক্য করতে পারে না।” তিনি বলেন, “জাতীয়ভাবে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আগামী প্রজন্মকে ভয়াবহ মানসিক সংকটের মুখে পড়তে হবে।”
আরও পড়ুন :
