
বাবার মৃত্যুর পর জমির নামজারি করাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন নওগাঁর কৃষক মমিনুল ইসলাম। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলেই দালাল ঘিরে ধরত—‘ভাই টাকা দিলে একদিনেই হবে, না হলে তিন মাসেও না’। প্রথমে কিছু না বুঝলেও পরে টের পান—এটাই ভূমি অফিসের বাস্তব চিত্র।
তবে এখন অনেক কিছু বদলেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সেবায় ঘরে বসেই করা যাচ্ছে নামজারি, খতিয়ান ও দাগ অনুসন্ধানসহ জমি সংক্রান্ত নানা আবেদন। ফলে সময়, খরচ ও হয়রানি—সবই কমে এসেছে সাধারণ মানুষের জন্য।
জমির মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, যেটিকে নামজারি বলা হয়, সেটি এখন অনলাইনে করা যাচ্ছে land.gov.bd ওয়েবসাইট অথবা ভূমি সেবা অ্যাপের মাধ্যমে। আবেদন করতে প্রয়োজন হবে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জমির দলিল নম্বর ও স্ক্যান কপি, খাজনা রসিদ, ওয়ারিশদের তথ্য এবং প্রয়োজনে ওয়ারিশ সনদ। নির্ধারিত ফি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই পরিশোধ করা যায়।
অনলাইনে নামজারি করতে প্রথমে www.land.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে “নামজারি” সেবায় যেতে হয়। সেখান থেকে একটি একাউন্ট খুলে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হয়। দলিলপত্র স্ক্যান করে আপলোডের পর আবেদন জমা দিতে হয় এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে হয়। এরপর আবেদন স্ট্যাটাস অনলাইনেই ট্র্যাক করা যায়।
এই অনলাইন সেবার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে—কোনো দালালের সাহায্য ছাড়াই সাধারণ মানুষ নিজেরাই আবেদন করতে পারছেন। ফলে দুর্নীতি কমছে এবং সেবা সহজতর হয়েছে।
সাভারের গৃহবধূ রোকসানা আক্তার বলেন, তিনি বাবার বাড়ির জমির অংশ পাওয়ার পর নামজারি করতে গিয়ে দালালের কাছে আটকে যান। পরে ছেলে অনলাইনে আবেদন করে দেয়, এতে কম খরচে এবং ঝামেলা ছাড়াই কাজ হয়।
কিশোরগঞ্জের স্কুলশিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকার যদি এই ডিজিটাল প্রক্রিয়াকে যথাযথভাবে পরিচালনা করে, তাহলে গ্রামের সাধারণ মানুষ জমি সংক্রান্ত হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।
তবে চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। অনেক ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এখনও ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল। কিছু জায়গায় কর্মকর্তারা অনলাইনে আবেদন না নিয়ে সরাসরি অফিসে আসতে বলছেন। কোথাও কোথাও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীরা প্রযুক্তির অপব্যবহার করেও সুবিধা নিচ্ছে। তবে ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত অনিয়ম বন্ধে নতুন প্রযুক্তি ও তদারকি ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।
নামজারি বা জমি সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য ও সহায়তার জন্য সরকারি হেল্পলাইনে ১৬১২২ নম্বরে যোগাযোগ করা যাচ্ছে। অভিযোগ জানানো যাচ্ছে www.land.gov.bd/complain ওয়েবসাইটেও।
ভূমি নিয়ে হয়রানি যেন অনেকটাই কমে এসেছে ডিজিটাল সেবার কারণে। সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণ এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় এই পরিবর্তন আরও জোরদার হবে—এমনটাই প্রত্যাশা করছেন দেশের সাধারণ মানুষ।