মঙ্গলবার, ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচন সময়মতো হওয়া উচিত, সেনাবাহিনী থাকবে নিরপেক্ষ”—জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

আবাসন নিউজ২৪| নিউজ ডেস্কঃ

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, ফাইল ছবি

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—নির্বাচন যেন সময়মতো অনুষ্ঠিত হয় এবং সেনাবাহিনী সবসময় থাকবে নিরপেক্ষ, পেশাদার ও দায়িত্বশীল ভূমিকায়।

 

 

 

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত—এমনটাই মনে করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তার মতে, দেশের ভবিষ্যৎ গতি নির্ধারণ করার একমাত্র অধিকার একটি নির্বাচিত সরকারই রাখতে পারে।
ঢাকা সেনানিবাসে বুধবার (২১ মে) আয়োজিত অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সামনে এমন বক্তব্য দেন তিনি। কেউ উপস্থিত থেকে, কেউ বা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে অংশ নেন এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায়।

সভায় সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে বলেন, “নির্বাচন সময়মতো হওয়া দরকার। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের হাতেই থাকা উচিত। সেনাবাহিনী তার নিজস্ব ভূমিকায় থেকে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে এবং নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করবে সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে।”

রাখাইন করিডর নিয়ে জোরালো মত

মানবিক করিডর স্থাপন নিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সম্ভাব্য উদ্যোগ সম্পর্কে সেনাপ্রধান বলেন, “এই ধরনের সিদ্ধান্ত কোনো অস্থায়ী কাঠামোর পক্ষে নয়। এটা নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো—জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই এসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া এই ধরনের সিদ্ধান্ত টেকসই হয় না।”

‘মব ভায়োলেন্স’ মোকাবেলায় কঠোর বার্তা

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ জনতার সহিংসতার প্রেক্ষাপটে সেনাপ্রধান কঠোর ভাষায় বলেন, “সেনাবাহিনী এখন আরও কঠোরভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত। মব ভায়োলেন্সের নামে বিশৃঙ্খলা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। যারা আইনশৃঙ্খলা ভাঙার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চট্টগ্রাম বন্দর: বিদেশি নিয়ন্ত্রণে সেনাপ্রধানের দৃষ্টি

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) বিদেশি পরিচালনার ইস্যুতে প্রশ্ন উঠলে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থানীয় জনগণ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং নির্বাচিত সরকারের মতামত নেয়া জরুরি।”

আরও পড়ুন  নির্বাচনেই চোখ, সংস্কার নিয়ে ভাবার সময় নয়ঃ সিইসি

সংস্কার কার্যক্রমে সেনাবাহিনীকে রাখা হয়নি জানিয়ে মন্তব্য

সরকারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সেনাপ্রধান বলেন, “আমি এ বিষয়ে অবগত নই। আমার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি, কোনো আলোচনা হয়নি।”

আসন্ন ঈদুল আজহা: জনগণের পাশে থাকবে সেনাবাহিনী

আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, “জনগণ যেন উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।”

সেনাবাহিনীর ভূমিকা: পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার বার্তা

সেনাপ্রধান তার বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই এমন কোনো কাজে যুক্ত হবে না, যা দেশের সার্বভৌমত্ব বা সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমাদের প্রত্যেক সদস্যকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন সামনে, সবাই সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে প্রস্তুত থাকুন।”

তিনি বর্তমান বাস্তবতায় দায়িত্ব পালনের জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সহযোগিতা করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো।”

WhatsApp
Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
Telegram