ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের গৃহবধূ নারগিস আক্তার। গত বছরের ৫ আগষ্টের পর থেকে তার স্বামী নিখোজ,এমনকি পরিবারের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখছেন না। জীবিকার তাগিদে নারগিস আক্তার(২৫) একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়ে সম্প্রতি একটি গাভী গরু কেনেন। সেই গরুর একটি এক মাস বয়সী বাছুরও রয়েছে।
স্বামীর কাছ থেকে পাওনা ২০ হাজার টাকা পাওনা দাবি করে, ঋণের টাকা না পেয়ে বুধবার সকালে ওই নারীর শেষ সম্বল দুধেল গাভী গরুটি নিয়ে গেছেন রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের মো: বেলাল খান নামে এক বিএনপি নেতা। মো: বেলাল খান উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
অসহায় ওই নারী বাছুরটিকে কোলে করে বিচার চাইতে বৃহস্পতিবার সকালে হাজির হন আদালতে।
মা গরুটিকে নিয়ে যাওয়ায় বুকের দুধ না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে বাছুরটি। আদালত চত্বরে বসে বোতলে করে বাছুরটিকে দুধ খাওয়ান নারগিস।
নার্গিস বেগমের অভিযোগ, স্বামী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় বেল্লাল ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না পেয়ে গরুটি নিয়ে গেছে। গরুর বাছুরটি মাকে হারিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট আমার স্বামী বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর মাটর সাইকেলটি নিয়ে যায় বেল্লাল। তার ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।
অভিযুক্ত মো. বেলাল খান বলেন, ৯ বছর আগে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প থেকে নারগিসের স্বামী আবু বকরকে আমি ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। সুদে-আসলে সেই টাকা এখন ৩০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। আমার টাকা না দেওয়ায় আমি গরুটি নিয়ে গেছি। টাকা পেলেই গরু ফেরত দিয়ে দেব। আমি কারও মোটরসাইকেল নিইনি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।'
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য(দপ্তরের দায়িত্বে) এডভোকেট মিজানুর রহমান মুবিন বলেন, এ ঘটনার সমযয় আদালতপাড়ায় তিনি উপস্থিত ছিলাম। ঘটনাটি সরাসরি দেখেছেন, তবে লিখিত কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা মিলে গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে এই বিষয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রাজাপুর সার্কেল) শাহ আলম জানান, এ বিষয়ে কেহ কোন অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে এ ঘটনা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এ ঘটনায় এখনো আদালতে কোনো মামলা হয়নি।
পরে স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় গরুর বাছুরটিকে দুধ খাওয়ানোর জন্য নারগিস গৃহবধূ বেলাল খানের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন।