সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া চর হতে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক পুশ-ইন করা ৭৫ জন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিকদের উদ্ধারপূর্বক মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে প্রকৃত আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে শ্যামনগর থানা চত্তরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন এ বিষয়ে একটি প্রেসব্রিফিং করেন।
প্রেসব্রিফিংএ বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান।
[caption id="attachment_83380" align="aligncenter" width="300"] ছবিঃশ্যামনগর থানায় প্রেস ব্রিফিং করছেন সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার ।[/caption]
এ সময় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার, শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর মোল্যা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন,পুলিশ ও কোস্টগার্ডের উপস্থিতিতে তাদেরকে শ্যামনগর থানা থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
[caption id="attachment_83381" align="aligncenter" width="300"] ছবিঃভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক পুশ-ইন করা বাংলাদেশী[/caption]
প্রেসব্রিফিং এ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন জানান যে,গত ৯ মে শুক্রবার ভোররাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৫ জন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক এবং ৩ জন ভারতীয় মুসলিমকে জোরপূর্বক পুশ-ইন করা হয় এবং তাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন যাবৎ ভারতের গুজরাট রাজ্যে বসবাস করে আসছিলেন ও বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চর হতে মান্দারবাড়ীয়া ফরেস্ট অফিসে এসে আশ্রয় নেয়। ফরেস্ট অফিস কর্তৃক কোস্টগার্ডকে অবহিত করলে বনবিভাগের সহায়তায় ১০মে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন পুশ ইন করা ৭৮ জন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় খাবার ও ঔষধ সামগ্রী সরবরাহ করে। ঊদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদেরকে ১১মে রবিবার শ্যামনগর থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
পুশইন হওয়া ব্যক্তিরা জানায় ভারতীয় পুলিশ তাদের বস্তি গুলোতে হানা দেয় এবং বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। এছাড়া তাদের পরিবারের সদস্যদের সামনে অমানবিক নির্যাতন সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও পাশবিক নির্যাতন করে।তারপর তাদের চোখ বেধে একটি সামরিক বিমানে ও পরিবারের সদস্যদের আরও একটি সামরিক বিমান যোগে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে স্থানান্তর করে। এখনও পর্যন্ত তাদের স্ত্রী সন্তানদের সঠিক অবস্থান জানে না। পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিরা আরও অমানবিক আচরণের বর্ণনাদেন।
সাতক্ষীরা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান শ্যামনগর থানা পুলিশ উপরোক্ত ব্যক্তিদের গ্রহণপূর্বক যাচাই-বাছাই করে দেখেন যে, ৭৫ জনের ভিতরে নড়াইল জেলার ৬৩ জন, সাতক্ষীরা জেলার ০১ জন, শরিয়তপুরের ০১ জন, খুলনার ০৬ জন, যশোরের ০২ জন, বরিশালের ০১ জন ও ঢাকার ০১ জন। তাদের প্রকৃত আত্মীয়-স্বজন আসলে সাধারণ ডায়েরীতে নোটপূর্বক এনআইডি কার্ডের ফটোকপি, জিম্মানামা ও মুচলেকা গ্রহণের মাধ্যমে তাদেরকে মঙ্গলবার (১৩ মে) হস্তান্তর করা হয়। তাদেরকে গ্রহণ করার পর উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের সমন্বিত প্রচেষ্টায় তাদের মধ্যে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয় এবং থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
তিনি আরও বলেন তিন জন জন্মসূত্রে ভারতের নাগরিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড কর্তৃক দায়েরকৃত এজাহার মূলে শ্যামনগর থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়। যাহা শ্যামনগর থানার মামলা নং-১৫, ধারা-৪,(বিনা পার্সপোর্টে অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করার অপরাধ)।
ভারতীয় তিন জন হলেন খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানার ফুলবাড়ীয়া গ্রামের খালিদ শেখের পুত্র আব্দুর রহমান(২০),নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মুন্না সাহার পুত্র মোঃ হাসান শাহ(২৪) ও একই গ্রামের সোহেল শেখের পুত্র সাইফুল শেখ(১৯)। তিন জনের জন্মসূত্রের ঠিকানা হল গুজরাট, নেহেরীনগর, জোপারপচ্চি, ফুলবাড়ীয়া। পুলিশ সুপার আরও বলেন তিন জনকে সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।