
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধঃ গ্রেপ্তারে আর নেই আইনি বাধা, অনলাইনে নজরদারিও জোরদার
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে আর কোনো আইনি জটিলতা নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর থেকেই মাঠপর্যায়ে দলটির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা সহজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি আদেশ জারির পর সমাবেশ, মিছিল কিংবা গোপন বৈঠকে অংশ নিলেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা যাবে। এ নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এরইমধ্যে দেশের সব থানায় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি নির্দেশনা
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো কার্যক্রম ঢাকা রেঞ্জে চলতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপিদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজে-কলমে আদেশ জারি হয়নি, তবুও কার্যত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে দলটির পক্ষে কেউ কোনো ধরনের মিছিল, সভা বা বৈঠক করলে, সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবে।
সামাজিক মাধ্যমে তৎপরতা পেলেই মামলা
শুধু মাঠপর্যায়েই নয়, অনলাইন বা সামাজিক মাধ্যমেও আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো ধরনের পোস্ট, মন্তব্য বা ভিডিও শেয়ার করলেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি বিদেশে বসে দলের পক্ষে প্রচারণা চালালেও দেশে ফিরলে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন শাখার এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা টুইটারে কেউ আওয়ামী লীগের পক্ষে কিছু বললে, পোস্ট দিলে বা মন্তব্য করলেও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করা যাবে। দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।”
আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্ট বার্তা
সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। সরকারের আদেশ অনুযায়ী পুলিশ এখন বৈধভাবে ব্যবস্থা নিতে পারবে।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জানান, দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী, সরকারের কোনো আদেশ অমান্যকারীকে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। এখন এই ধারা অনুযায়ী গ্রেপ্তার ও শাস্তি কার্যকর হবে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও নিষেধাজ্ঞা আসছে
এদিকে, অনলাইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধে নেওয়া হয়েছে কড়া পদক্ষেপ। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, “শুধু অফলাইনে নয়, অনলাইনেও আওয়ামী লীগের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকারি পরিপত্র জারি হলেই বিটিআরসির মাধ্যমে ফেসবুক, ইউটিউব ও অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দলটির সকল কার্যক্রম বন্ধে চিঠি পাঠানো হবে। বর্তমানে ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে দলের একটি ভেরিফায়েড পেজে প্রায় ৪০ লাখ অনুসারী রয়েছে। সেটিও নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করা হবে।