মঙ্গলবার, ১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আন্দোলনের মূল্য চাকরি হারিয়ে দিলঃ রূপপুর প্রকল্পের ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত

নুর নবী পাবনা জেলা প্রতিনিধিঃ

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে চলমান এক অভ্যন্তরীণ উত্তেজনার জেরে চাকরি হারিয়েছেন প্রকল্পের ১৮ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। মূল অভিযোগ—ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেওয়া। অথচ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করাই যেন হয়ে দাঁড়াল তাদের চাকরি হারানোর কারণ।

রোববার (১১ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস।

📌 অব্যাহতির পেছনের পটভূমি

সবকিছু শুরু হয় গত ২৮ এপ্রিল থেকে। এনপিসিবিএল-এর একাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাসানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৬ মে ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। এর পরদিন প্রকল্প এলাকার অফিসে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।

এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির জের ধরেই ৮ মে কোম্পানি থেকে চাকরিচ্যুত হন ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ড. জাহেদুল হাসান স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক চিঠিতে জানানো হয়, “চাকরিবিধি না মানায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে” এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

📩 অব্যাহতির চিঠিতে কী বলা হয়েছে?

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “নোটিশ পেমেন্ট বাবদ তিন মাসের বেতন প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে নিরাপত্তার স্বার্থে বরখাস্তকৃতদের রূপপুর প্রকল্প এলাকা ও গ্রিনসিটিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”

চাকরিচ্যুত প্রকৌশলী হাশমত আলী বলেন,

> “ইমেইলে নোটিশ পেয়েছি। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানানো হয়নি। হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত আমাদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।”

 

তিনি আরও জানান, বরখাস্ত হওয়া ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ৩ জন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তাদের কেউ এক দশকের বেশি সময় ধরে এই প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন।

⚖️ আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি

চাকরিচ্যুত কর্মীদের অনেকেই জানিয়েছেন, তারা আইনি দিক বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। এদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

একজন অভ্যন্তরীণ সূত্র জানান, আন্দোলনের পেছনে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ, স্বজনপ্রীতি, এবং অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা কর্তৃপক্ষ বারবার উপেক্ষা করেছে।

🔒 প্রশাসনের ভাষ্য

এনপিসিবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন,

> “চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নিয়ম মেনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু বলা সম্ভব নয়।”

 

প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুসও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও জানান।

🤝 মানবিক দৃষ্টিকোণ: শুধু চাকরি নয়, ভেঙে পড়েছে পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ

চাকরিচ্যুত কর্মীদের অনেকেই একক উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। হঠাৎ চাকরি হারিয়ে এখন তাদের সামনে চরম অনিশ্চয়তা। শিক্ষিত, দক্ষ এই কর্মকর্তারা শুধু প্রতিষ্ঠানের জন্যই নয়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অবদান রাখছিলেন।

একজন কর্মচারীর স্ত্রীর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলা কথা,

> “স্বামীর চাকরিটা ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। কীভাবে সন্তানদের পড়াশোনা চলবে, বুঝতে পারছি না।”

 

📢 বিশ্লেষকদের মতামত

বিশ্লেষকদের মতে, এমন সংবেদনশীল প্রকল্পে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতপ্রকাশ ও অভিযোগ জানানোকে সম্মান জানানো উচিত ছিল। অব্যাহতির মতো কঠিন সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

পাঠক প্রিয়,

আপনিও আবাসননিউজ২৪.কম-এ ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি নিয়ে লিখতে পারেন।

আপনার লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ [email protected]