
দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, কারসাজি ও লুটপাটে বিপর্যস্ত দেশের শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই নির্দেশনাগুলো দেন তিনি।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে বলেন, “শেয়ারবাজারকে যে অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা অকল্পনীয়। আমাদের অবশ্যই এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে। শেয়ারবাজার যেন আর লুটেরাদের আড্ডাখানা না হয়, বরং এটি যেন হয় মানুষের আস্থার কেন্দ্র। এজন্য অবিলম্বে সংস্কার জরুরি।”
প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ নির্দেশনা
(১) সরকারি মালিকানাধীন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়া:
যেসব বহুজাতিক কোম্পানির মালিকানায় সরকার অংশীদার, তাদের শেয়ার পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে বাজারে মানসম্পন্ন শেয়ারের পরিমাণ বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে।

(২)দেশীয় বড় বেসরকারি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে প্রণোদনা:
বেসরকারি খাতের সুপ্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর বাজারে তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে উৎসাহমূলক নীতিমালা ও আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা নিতে হবে।
(৩) তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কারে বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ:
পুঁজিবাজারে স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি ঠেকাতে এবং বাজারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে তিন মাসের মধ্যে কার্যকর সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
(৪)অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা:
যারা শেয়ারবাজার লুটপাট করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বস্ব হারিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় না আনলে বাজারে আস্থা ফিরবে না।

(৫) ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমাতে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ড ও ইক্যুইটিতে উৎসাহ:
বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহে আগ্রহী হয়—এ জন্য নীতিগত সহায়তা ও সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট—সংস্কারই একমাত্র পথ
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “গত কয়েক দশকে পুঁজিবাজারকে যারা পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় না আনলে জনগণের আস্থা ফেরানো যাবে না। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই—পুঁজিবাজারকে একটি নিরাপদ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব জায়গায় পরিণত করা।”
তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত সংস্কার কার্যক্রম চলবে। সরকার এ বিষয়ে আপসহীন থাকবে।
উপস্থিত ছিলেন শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকরা
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নির্দেশনাগুলো যদি বাস্তবায়ন হয় এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে পুঁজিবাজারে নতুন করে আস্থা ফিরতে পারে।