বিএনপি বিশ্বাস করে, যে কোনো রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হোক আইন ও আদালতের মাধ্যমে—not নির্বাহী আদেশে। সম্প্রতি এক জাতীয় দৈনিককে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ এমনটাই জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে আমরা বিশ্বাসী। কাউকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা ঠিক নয়। আদালতই ঠিক করুক, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করবে কিনা।"
‘রিকনসিলিয়েশন’-এর পথেই শান্তি খোঁজে বিএনপি
আওয়ামী লীগের মতো বিরোধীদের জন্যও বিএনপির ‘রিকনসিলিয়েশন’ প্রস্তাব প্রযোজ্য কিনা—এমন প্রশ্নে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস আমাদের দেখিয়েছে, প্রতিহিংসা নয়, মীমাংসাই পারে একটি জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে। কতজনকে সাজা দিয়ে সমাজ ঠিক রাখা যাবে? তাই আমরা চাই, শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটা সমাধানে পৌঁছাতে।”
আনুপাতিক উচ্চকক্ষে আপত্তি কেন?
আনুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবকে বিএনপি কেন সমর্থন করছে না—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা সংবিধান সংস্কারের পক্ষে, তবে বাস্তবতা বুঝে। উচ্চকক্ষে যদি কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠ না হয়, সরকার গঠনে জোট করতে হবে। তখন শুরু হবে দর কষাকষি, চাপের রাজনীতি। তাতে রাষ্ট্র পরিচালনায় জটিলতা বাড়বে। আমরা চাই কার্যকর ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিচার বিভাগের ভূমিকা
বিচার বিভাগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে না জড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, “একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার ছিল, কারণ রাজনৈতিক আস্থা ছিল না। কিন্তু এতে বিচার বিভাগকেও রাজনৈতিক বিতর্কে টেনে আনা হয়েছে। এখন সময় এসেছে, রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে সুষ্ঠু পদ্ধতির দিকে এগোনোর।”
অতীতের সংশোধনী আর বর্তমান পরিস্থিতি
পঞ্চম ও একাদশ সংশোধনীর দৃষ্টান্ত টেনে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সংবিধান এখনো বলবৎ। তাই বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটা আইনি হবে না। আমরা চাই, রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলেও তা সংসদের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন হোক।”
অভিযুক্ত মানেই অপরাধী নয়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “বিশ্বের কোথাও অভিযুক্ত মানেই অপরাধী নয়। কেউ সাজা না পাওয়া পর্যন্ত তাকে নির্বাচনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। এই নীতি যদি আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়, তবুও আমরা বলি—নিরপেক্ষ বিচার হোক, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়।”
“মানুষই ঠিক করবে কারা রাজনীতি করবে”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, “আওয়ামী লীগ রাজনীতি করবে কি না, সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা মানুষ আর আদালতের। সরকার চাইলে আইন সংশোধন করে বিষয়টা পরিষ্কার করতে পারে। আমরা শুধু বলছি—কারো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যেন গণতান্ত্রিক নিয়মেই নির্ধারিত হয়।”