
পর্যটকের ঢল কুয়াকাটায়, প্রাণ ফিরে পেল ‘সাগরকন্যা’ সূর্য উদয়-সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতে হাজারো মানুষের ভিড়
সাগরকন্যা’ নামে খ্যাত কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার বিস্ময়কর এক পর্যটনকেন্দ্র। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকত দেশের একমাত্র স্থান, যেখান থেকে দাঁড়িয়ে একসাথে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। প্রাকৃতিক এই অনন্য বৈশিষ্ট্যই কুয়াকাটাকে করেছে পর্যটকদের কাছে স্বর্গসম এক গন্তব্য।
বিশাল প্রশস্ত সৈকত, ঢেউয়ের ছলাৎছল, সোনালি বেলাভূমি, কোলাহলবিহীন প্রকৃতি, ঝাউবন, রাখাইন সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার সমন্বয়ে কুয়াকাটা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেই দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটক প্রতিবছর ছুটে আসেন এখানে।
বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি থাকায় কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের আগমন শুরু হয় আগেই। তবে আজ শুক্রবার (২ মে) ছুটির দিনে সৈকতে নামে পর্যটকদের ঢল। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত সৈকতের প্রতিটি কোণে ছিল প্রাণের স্পন্দন। সূর্যাস্ত দেখতে বিকেলে হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা কুয়াকাটা।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই সৈকতে ভিড় করে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ভ্রমণপিপাসুরা। কেউ সাগরের নোনা জলে গা ভাসাচ্ছেন, কেউ পরিবার-বন্ধুবান্ধব নিয়ে বসে আছেন সৈকতের বালুচরে। সূর্য যখন ধীরে ধীরে গোধূলির আকাশে বিলীন হচ্ছে, ঠিক তখন গোটা সৈকতজুড়ে সৃষ্টি হয় অপার্থিব এক দৃশ্য। পর্যটকদের অনেকেই জানিয়েছেন, অনেকদিন পর কুয়াকাটা এভাবে ভরে উঠেছে প্রাণে। ঈদের পর কিছুদিন পর্যটক এলেও এখনকার মতো প্রাণবন্ততা ছিল না।
এই ভ্রমণচিত্রের মধ্যেই ফোনে কথা হয় কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকের মোঃ জুয়েল ফরাজীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “কুয়াকাটায় প্রায় ২ শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হোটেল ইতোমধ্যেই বুকিং হয়ে গেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে অনলাইনের মাধ্যমে বেশি বুকিং হচ্ছে। ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটকের চাপ রয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিকরা জানাচ্ছেন, এই পর্যটকদের আগমনে আবারও কুয়াকাটার অর্থনৈতিক চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। দোকানপাট, খাবারের হোটেল সহ শুঁটকি ব্যবসায়েও লেগেছে খুশির ছোঁয়া।
সতর্কতার অংশ হিসেবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পর্যটকদের সহায়তায় কাজ করছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আজকের এই শুক্রবার যেন কুয়াকাটাকে নতুন প্রাণ দিয়েছে। পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত সৈকত, টাটকা রোদে ঝলমলে বালুচর, আর চোখ জুড়ানো সূর্যাস্ত—সবকিছু মিলিয়ে কুয়াকাটা আজ সত্যিই ‘সাগরকন্যা’র রূপে সেজেছে।