
প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে নতুন উদ্যোগ— ছোট পরিসরে যাত্রা শুরুর পথে নির্বাচন কমিশন
দেশের বাইরে থাকা লাখো বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটাধিকার এখন আর কেবল স্বপ্ন নয়। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবার সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং বা প্রক্সি ভোটিং—যে কোনো একটি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য সীমিত পরিসরে ভোটের সুযোগ তৈরির পরিকল্পনা করছে ইসি।
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, “আমরা চাচ্ছি এবার অন্তত শুরুটা হোক। ছোট পরিসরে হলেও যাত্রা শুরু করা জরুরি। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ছাড়া আমাদের সব চেষ্টা নিরর্থক হয়ে যাবে।”

সেই সেমিনারে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি-সহ অন্তত ২১টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সিইসি বলেন, “আপনাদের উপস্থিতি আমাদের আশাবাদী করে। আমরা বিশ্বাস করি—নির্বাচন কমিশনের সব উদ্যোগে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
সিইসি জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রবাসীদের ভোটের বিষয়টি তাঁদের অগ্রাধিকারের শীর্ষে ছিল। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে শুধু আমরা নয়, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি—প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের ভোটাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। এমনকি দেশের রাজনৈতিক নেতারাও এই ইস্যুতে সোচ্চার।”
তিনি আরও বলেন, “প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে যেভাবে অবদান রাখছেন, তেমনভাবেই দেশের গণতন্ত্রে অংশগ্রহণের সুযোগও তাদের প্রাপ্য। আমাদের কাজ হচ্ছে সেই পথটা তৈরি করা।”

নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে কয়েক মাস ধরে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা ও পর্যালোচনা চালিয়েছেন বলে জানান সিইসি। “তারা আমাদের নানা ধরনের বাস্তবভিত্তিক পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা, রাজনৈতিক পরিবেশ এবং শিক্ষার স্তর বিবেচনায় রেখেই আমরা এগোচ্ছি,”—বলেন তিনি।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন। সিইসি বলেন, “আমরা যত পরিকল্পনা করি, যত পরিশ্রমই করি—দলগুলোর সমর্থন না থাকলে সব কিছুই ব্যর্থ হয়ে যাবে।”
প্রবাসী ভোটিং চালুর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, আইনি কাঠামো, খরচ এবং জনআস্থার বিষয়গুলো মাথায় রেখেই এগোনো হবে বলে জানান তিনি। সেইসঙ্গে অংশগ্রহণকারী সবার কাছে লিখিত মতামতও চেয়েছেন তিনি, যাতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
সিইসি তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশ এই ধরনের ভোটিং ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছে। কেউ সফল হয়েছে, কেউ পারেনি। আমরা সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই চাই অন্তত শুরু হোক। ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব হবে।”
এই উদ্যোগ শুধু একটি নতুন দিগন্তের সূচনা নয়, এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণের পথে বাস্তব পদক্ষেপ। দেশের গণতন্ত্রকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত একটি বড় অগ্রগতি—এই বার্তাই যেন দিতে চাইলেন দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
মেটা-বর্ণনা (Meta Description):
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সীমিত আকারে অনলাইন বা পোস্টাল ব্যালট চালুর পরিকল্পনা করছে। সিইসি জানালেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন ছাড়া সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে