
কাশ্মিরে ভয়াবহ হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তান তীব্র উত্তেজনা, ট্রাম্প বললেন “ওরা নিজেরাই সমাধান করবে”
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ফের তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি অবস্থান গ্রহণ করছে উভয় দেশ। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই মুখ খুলেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, “ওরা (ভারত-পাকিস্তান) কোনো না কোনোভাবে এটা ঠিক করে নেবে।”
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ভ্যাটিকানে প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাওয়ার সময় ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। সেই সময় কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি ভারতের খুব ঘনিষ্ঠ, আর আমি পাকিস্তানেরও খুব কাছের। কাশ্মির নিয়ে ওদের লড়াই হাজার বছরের পুরনো—সম্ভবত তার চেয়েও বেশি সময় ধরে। এটা ছিল খুবই খারাপ একটি ঘটনা।”

ট্রাম্প বলেন, “কাশ্মিরে যেটা ঘটেছে সেটা দুঃখজনক। তবে আমি নিশ্চিত, তারা নিজেরাই কোনো না কোনোভাবে সমাধানের পথ খুঁজে নেবে। আমি দুই দেশের নেতাকেই ভালোভাবে চিনি। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে প্রচণ্ড উত্তেজনা রয়েছে, কিন্তু তা নতুন কিছু নয়। সবসময়ই এই উত্তেজনা ছিল।”
পহেলগাম হামলার ভয়াবহতা
গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের ভয়াবহ হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ২৬ জন। নিহতদের মধ্যে ২৫ জনই ভারতীয়, অপরজন নেপালি নাগরিক। এটি ২০১৯ সালের পর থেকে কাশ্মিরে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এই নৃশংস হামলার দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF)। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এই টিআরএফ আসলে পাকিস্তানভিত্তিক কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বারই একটি ছায়া সংগঠন।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া
কাশ্মিরে এমন বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোনো দেশের পক্ষ থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপের আহ্বান আসেনি, তবে ট্রাম্পের মন্তব্য কিছুটা হলেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পহেলগাম হামলার জেরে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে কাশ্মির ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে যে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে, তা আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক তৎপরতা জরুরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের উচিত দুই দেশের মধ্যে সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানানো। কারণ ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর। যেকোনো সামরিক উত্তেজনা শুধু অঞ্চলেই নয়, গোটা বিশ্বেই অস্থিতিশীলতা ডেকে আনতে পারে।
এদিকে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ হামলার ঘটনায় কড়া জবাব দেবে। সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি, সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানও নিজেদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কাশ্মিরে আবারও রক্ত ঝরার ঘটনায় শুধু ভারত বা পাকিস্তান নয়, সারা বিশ্বেই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দুই দেশের নেতৃত্বের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও জরুরি হয়ে উঠেছে।