মঙ্গলবার, ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এবার টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ

মোহাম্মদ ইউনুছ অভি টেকনাফ কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ

এবার কক্সবাজারের টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এতে স্থলবন্দরে প্রায় তিন হাজার বস্তা আলু গুদামে পড়ে আছে। যার কারনে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল আরাকান আর্মি দখলে থাকা রাখাইন রাজ্যে থেকে ১৩৮ পিচের একটি কাঠের বোট এসেছিল। এরপর থেকে আর কোন পণ্যে আমদানি-রপ্তানি হয়নি। তবে তার আগ থেকে গত তিন মাস ধরে ইয়াংগুন-টেকনাফ স্থলবন্দর সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। ফলে পুরোপুরিভাবে স্থলবন্দরের কার্যক্রম বন্ধের পথে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করে টেকনাফ স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, ‘ইয়াংগুনের পর এবার আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইনের টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। মূলত ওপারে সমস্যার কারনে কোন মালামাল যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের এখান থেকে মালামাল যেতে কোন বাধাঁ নেই।’
তিনি বলেন, ‘১২ দিন ধরে মংডু-টেকনাফ স্থলবন্দের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। যার কারনে স্থলবন্দরের কার্যক্রম প্রায় শূন্য কোঠায়। কেননা এর আগ থেকে আরাকান আর্মির কারনে গত তিন মাস ধরে ইয়াংগুন-টেকনাফ স্থলবন্দর সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে টেকনাফ স্থলবন্দরে জেটি ঘাটে নৌঙরে থাকা বোট থেকে আলু আন-লোড করছে শ্রমিকরা। মূলত আলু ভর্তি বোট দুটি মংডু যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আরাকান আর্মির অনুমতি না পাওয়ায় মালামালগুলো নামিয়ে ফেলা হচ্ছে। বন্দরে এই মুহূর্তে ২ হাজার ৭০০ বস্তা আলু রয়েছে। এর মধ্যে সবুজ এন্ড ব্রাদার্স সাদ্দামের ২ হাজার ১০০ বস্তা এবং এক্সপ্রেস এজেন্সী ফারুকের ৬০০ বস্তা। বসেব আলু মংডুতে যাওয়ার কথা ছিল।
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘এবার টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্যে বন্ধ রয়েছে। গত ১০-১২ দিন থেকে মালামাল আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। মূলত আরাকান আর্মির অনুমতি না পাওয়ায় এখান থেকে পণ্যে যাচ্ছে না। পাশাপাশি সেখান থেকে কোন পণ্য আসছেনা।’
তিনি বলেন, ‘স্থলবন্দরে অবস্থা খুব খারাপের দিকে। কেননা এর আগে গত তিন মাস ধরে মিয়ানমার ইয়াংগুন-টেকনাফ সীমান্ত বাণিজ্যে বন্ধ করে দেয় জান্তা সরকার। যার কারনে আমাদের রপ্তানির জন্য নিয়ে আসা ২ হাজার বস্তা আলুর পাশাপাশি দশ হাজার বস্তা সিমেন্ট স্থলবন্দরে পড়ে আছে। পচনশীল হওয়ায় আলু নষ্ট হওয়ার পথে। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছে। তাই সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ দ্রত সময়ে মিয়ানমারের উভয় পক্ষ সাথে আলোচনা করে সীমান্ত বাণিজ্যে পূর্ণ উদ্ধারের চেষ্টা করা।’

আরও পড়ুন  যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের ওপর হামলা ও বৈষম্য বেড়েছে ৭০%

বন্দরের কাস্টম কর্মকর্তারা জানায়, রাখাইন রাজ্যে দখলের পর থেকে আরাকান আর্মি কারনে টেকনাফ-ইয়াংগুন থেকে সীমান্ত বাণিজ্যে রয়েছে গত তিন মাস ধরে। তখন থেকে ছোট্র পরিসরে চালু থাকা এবার টেকনাফ-মংডু সীমান্তে আমদানি-রপ্তানিও বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ গত মার্চে রাখাইন রাজ্যে থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে ৬৭৫.৪৩ মেট্রিক টন বিভিন্ন পণ্যে আমদানি রয়েছে। এতে সরকার ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৫ হাজার ২৬৫ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫২৪.৫২ ডলারের ৩ হাজার ৪৫৫.৯৮৪ মেট্রিক টন বিভিন্ন মালামাল রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্য উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আলু, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিক প্রোডাক্ট।

এ ব্যাপারে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্টান ইউনাইটেড ল্যান্ড র্পোট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মালিকবিহীন বিজিবির জব্দকৃত কাঠগুলো আমাদের হেফজতে রয়েছে। এছাড়া এবার টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্যে বন্ধ রয়েছে। আপাততে আরাকান আর্মির সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা কোন পণ্যে আমদানি-রপ্তানি করছেনা। ফলে গুদামে আলু, সিমেন্টসহ বিভিন্ন মালামাল রয়েছে।’
স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা মনির আহমেদ বলেন, ‘পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার পথে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম। গত কিছু দিন ধরে টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্যে বন্ধ রয়েছে। যার ফলে শ্রমিকরা বেকার সময় পার করছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের রপ্তানির উদ্দেশে আনা আলুসহ বিভিন্ন পণ্যে পচন ধরেছে। এতে ব্যাপক লোকসানে পরছে ব্যবসায়ীরা।’

WhatsApp
Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
Telegram