শাহপরীর দ্বীপে লবণ ও মাটি বোঝাই কর্দমাক্তে দৃষ্টিনন্দন সড়ক এখন মৃত্যুকূপ
দেশের সর্বদক্ষিণ সীমান্ত অঞ্চল শাহপরীর দ্বীপে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন নতুন সড়কে লবণ পানি পড়ে ও মাটি বিক্রি চক্রের কারণে বর্তমানে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এ সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা। প্রতিদিন চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এই অঞ্চলে বসবাসকারী অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে। নিয়ম থাকলেও লবণবাহী ট্রাকে জিইওট্যাক্স (মোটা ত্রিপল) ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উক্ত সড়কের পাশে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হলেও তা সহজে কেউ মানছে না।
সরেজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় লবণ উৎপাদিত হয় বেশি। নৌপথ ও স্থলপথে এসব লবণ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। নৌপথে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় সেখান থেকে লবণ বোঝাই সারি সারি ট্রাক চলাচল করছে এই সড়কের ওপর দিয়ে। সড়কের পাশে সরকারি খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালি তুলে বিক্রি করছে প্রভাবশালী চক্র। এসব মাটি ট্রাকে পরিবহনের সময় মাটি রাস্তায় পড়ে একটি আস্তরণ সৃষ্টি হয়। ওই আস্তরণে লবণ পানি ও কুয়াশার স্পর্শে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে। ফলে চলমান গাড়ি ব্রেক কষলেই আঠালো আস্তরণের স্পর্শে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়কটি এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। লবণ পরিবহনে সরকারি নিয়ম পালন করছেন না অসাধু লবণ ব্যবসায়ীরা। নিয়ম থাকলেও লবণবাহী ট্রাকে জিইওট্যাক্স (মোটা ত্রিপল) ব্যবহার করা হচ্ছে না। টেকনাফ থেকে রাতে শাহপরীর দ্বীপ যাওয়া যাত্রীরা আতংকে আর ঘরে ফিরেন না অনেকেই। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উক্ত সড়কের পাশে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।
সিএনজি চালক মোহাম্মদ হোসেন জানান, কয়েকদিন চলমান অবস্থায় ব্রেক কষাতেই আমার সিএনজিটি খালে নেমে গেছিল। তিনি আরও বলেন শাহপরীর দ্বীপ রাস্তার বড় ব্রিজের আগে ছোট বড় প্রায় ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। আহত হয়েছে অনেকে।
মুহাম্মদ জুবায়ের জানান, ১০/১৫দিন আগে টেকনাফ হয়ে মোটর সাইকেলযোগে শাহপরীর দ্বীপ ফেরার পথে লবণ নিঃসৃত পানিতে পিচ্ছিল রাস্তায় ব্রেক কষলেই আঠালো আস্তরণের স্পর্শে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। প্রায় ১০ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।
মোটর সাইকেল আরোহী নুরুল আমিন জানান, প্রতিদিন লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানিতে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত হারিয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ সড়ক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।
আবার দিনে সূর্যের আলোতে পিচ্ছিল রাস্তা শুকিয়ে গেলেও অনেক জায়গায় গাছপালার কারণে আলো না পড়ায় পিচ্ছিলই থেকে যায়। তাই মহাসড়কে মোটর সাইকেল চালানোর সময় সামান্য ব্রেক কষলেই দুর্ঘটনা ঘটে। আবার অনেক সময় রাস্তা এতো পিচ্ছিল থাকে ব্রেক না কষলেও দুর্ঘটনা ঘটে। কর্দমাক্ত সড়কে গাড়ি চালাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে একাধিক চালক জানিয়েছেন।
এদিকে, এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকবাহী গাড়ি টেকনাফে আসা-যাওয়া করছে। আগে থেকে এই সড়ক সম্পর্কে চালকদের ধারণা না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। তাই লবণবাহী ট্রাক থেকে যাতে পানি নিঃসৃত না হয় ও পরিবহনের সময় কাঁচামাটি রাস্তায় না পড়ার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উর্ধ্বতন মহলের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাস