মঙ্গলবার, ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্য অপহরণ,টেকনাফের পাহাড় থেকে সিলেটের ছয় শ্রমিক উদ্ধার

মোহাম্মদ ইউনুছ অভি টেকনাফ প্রতিনিধিঃ

মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্য অপহরণ,টেকনাফের পাহাড় থেকে সিলেটের ছয় শ্রমিক উদ্ধার

মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্য অপহরণ,টেকনাফের পাহাড় থেকে সিলেটের ছয় শ্রমিক উদ্ধার

অবশেষে সাত দিনের মাথায় কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ি এলাকা থেকে সিলেটের ছয় শ্রমিককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে টেকনাফের সদর ইউনিয়নের রাজারছড়া পাহাড়ি এলাকায় থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্য তাদের অপহরণ করেছিল পাচারকারীরা।

এর আগে একই দিন সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলায় কাজের সন্ধানে এসে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার এক গ্রামের ছয়জন শ্রমিক অপহরণের অভিযোগে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল অপহৃত এমদাদ উদ্দিনের ছোট ভাই বাহার উদ্দিন।

পাহাড় থেকে অপহরণের শিকার সিলেটের ছয় শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুদ্দিন শাহীন বলেন, ‘অপহরণকারীরা তাদের মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশে পাহাড়ি এলাকায় জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। পুলিশ তাদের খোঁজে রাজারছড়া পাহাড়ি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। পরে অপহরণ কারীরা পালিয়ে গেলে অপহৃত সিলেটের ছয় শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়। তারা সবাই সুস্থ আছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জড়িতদের খোঁজে বের করা হচ্ছে। ‘

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল কাজের উদ্দেশ্যে জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্য বের হয়ে সাত দিন ধরে নিখোঁজ ছিল শ্রমিকরা। তাঁরা পেশায় সবাই রাজমিস্ত্রী।

পুলিশ বলেছিল, তাঁদের সবার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। সর্বশেষ নিখোঁজদের মধ্যে দুজনের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান টেকনাফের রাজারছড়া এলাকা পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে টেকনাফের রাজারছড়া মানব পাচার ও অপহরণকারীদের মূল আস্তনা। নিখোঁজরা মানব পাচার ও অপহরণকারী চক্রের ফাঁদে পড়েছিল।

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ভিকটিমন্বয় পেশায় রাজমিস্ত্রি। সেই সুবাদে রাজমিস্ত্রি কাজের উদ্দেশ্যে ১৫ এপ্রিল বিকেলে অজ্ঞাত বিবাদীরা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য পুরনের জন্য ভিকটিমদের জোর পূর্বক অপহরণ করিয়া টেকনাফ এলাকায় নিয়া যায় বলে জানায় ভিকটিম মোঃ রশিদ আহমদ। এরপর থেকে খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন  টেকনাফ স্থলবন্দর অচল

এদিকে চাইলে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘সিলেটের নিখোঁজ ছয় শ্রমিকদের টেকনাফের পাহাড় থেকে উদ্ধার করেছে সেখানকার পুলিশ। তারা এখন টেকনাফ থানায় রয়েছে। এর আগে তারা কক্সবাজারের কাজের উদ্দেশে বের হলে আমার এলাকার ছয় যুবক নিখোঁজ হন। অবশেষে সাত দিনের মাথায় তাদের পাওয়া যায়।’

নিখোঁজ ৬ জন হলেন, জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯) ও মৃত সরবদি’র ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫) ও মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২)।

নিখোঁজ পরিবারের ভাষ্য ছিল, গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ৫ তরুণসহ ছয় জন কাজের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছার পর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারে চরম দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। নিখোঁজ সবাই রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন।

অপহৃত এমদাদ উদ্দিনের ছোট ভাই বাহার উদ্দিন বলেন, ‘আমরা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছে বলে অবহিত করা হয়েছে। পরে রাতে তাদের উদ্ধারের খবর দেয় পুলিশ। আমরা পুলিশে ধন্যবাদ জানায়।’

নিখোঁজ রশিদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেছিলেন, রশিদ কয়েক বছর থেকে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতো। বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল। এবার কক্সবাজার যাওয়ার পর থেকে রশিদসহ সঙ্গে থাকা সবার মোবাইল ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তাদের লোকেশন টেকনাফের রাজারছড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমরা খুব চিন্তিত কারন টেকনাফ অপহরণ এবং মানব পাচার প্রবণ এলাকা।’

জকিগঞ্জ উপজেলার চৌকিদার ফয়সাল আহমেদ বলেছিলেন, ‘আমার এলাকার ছয় শ্রমিক প্রায় সময় কক্সবাজারের কাজ করতে যায় বাবুল নামে এক ঠিকাদারের অধীনে। বাবুল ঠিকাদারের কাজ না থাকায় টেকনাফের এক পরিচিত ছেলে সাথে টেকনাফে কাজ করতে বের হন। তখন থেকে তাদের ফোন বন্ধ রয়েছে।’

আরও পড়ুন  টেকনাফে ইয়াবা অস্ত্র, গোলা ও ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনেছি। আমিও চেষ্টা করছি তাদের খোজঁ খবর নেওয়ার জন্য। তাদের লোকেশন যে এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে সেটি ভয়ঙ্কর এলাকা। কেননা এর আগেও থ্রি মার্ডার সেখানে (রাজারছড়া) হয়েছিল। অবশেষে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাথে জড়িত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

WhatsApp
Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
Telegram