রবিবার, ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চীনের বিশেষায়িত হাসপাতাল নলছিটিতে স্থাপন করার দাবিতে নলছিটিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান।

সামীর আল মাহমুদ ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ

চীনের বিশেষায়িত হাসপাতাল নলছিটিতে স্থাপন

চীনের বিশেষায়িত হাসপাতাল নলছিটিতে স্থাপন করার দাবিতে নলছিটিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান।

চীনের বিশেষায়িত হাসপাতাল নলছিটিতে স্থাপন করার দাবিতে নলছিটিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান।

চীনের উপহারের বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল নলছিটি উপজেলার দপদপিয়ায় বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কের পাশে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে অথবা কুমারখালি মরা নদীর ১২০ একর খাস জমির মধ্যে স্থাপনের দাবি ও মাওয়া ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৬ লেন সড়কের দাবি জানিয়ে ঐতিহ্যবাহী নলছিটি বাস স্ট্যান্ডের চায়না কবরস্থানের সামনে মানববন্ধন এবং বাংলাদেশে চায়না দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

চীনের বিশেষায়িত হাসপাতাল নলছিটিতে স্থাপন
২২ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল দশটায় নলছিটি বাস স্ট্যান্ডের চায়না কবরস্থানের সামনে স্থানীয় সাধারণ মানুষ এ মানববন্ধন আয়োজন করেন।এতে বক্তব্য রাখেন ইজিবাইক শ্রমিক নেতা আল আমীন হাওলাদার,বিডি ক্লিন সমন্বয়কারী মারজান,সমাজকর্মী বালী তূর্য প্রমূখ।এসময় বক্তারা বলেন,বৈষম্যহীন বাংলাদেশের বৃহৎ দক্ষিনাঞ্চলে চীনের উপহারের একটি হাসপাতাল পাওয়া বরিশালবাসীর ন্যায্য পাওনা।তারা বলেন ভারত চিরদিন আমাদেরকে শুষে নিয়েছে বন্ধু পরিচয়ে,কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চীনই আমাদের প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় দিয়েছে সব সময়।এবং চীনের সাথে নলছিটির সম্পর্ক প্রায় দেড় হাজার বছর পুরনো।তাই এই তিনটি না হলেও প্রয়োজনে আরেকটি হাসপাতাল স্পেশালি করে দেয়ারও দাবি জানান তারা।এছাড়াও বক্তারা বলেন,আমরা জেলার নলছিটি এলাকার সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাসে একটি আন্তরিক আবেদন জানাচ্ছি।সমাজকর্মী বালী তাইফুর রহমান তূর্য তার বক্তব্যে বলেন, ভারত সবসময় বন্ধু পরিচয়ে আমাদের শোষণ করেছে, কিন্তু চীন বরাবরই বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছে।
এছাড়া বক্তারা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, দপদপিয়া এলাকাটি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সংযুক্ত ও একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কেন্দ্রস্থল হওয়ায় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান। তারা জানান, হাসপাতাল স্থাপনে জমি ও স্থানীয় সহযোগিতা প্রদানে নলছিটির জনগণ প্রস্তুত রয়েছে।

নলছিটির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো—যার সাক্ষ্য মেলে “চায়না বাজার”, “চায়না ফিল্ড” এবং “চায়না কবর” এর অস্তিত্বে।
চীনা সরকারের উপহারে নির্মাণাধীন তিনটি ১০০০ শয্যার “চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল” এর একটি যেন নলছিটি শহরের দপদপিয়াএলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা বরিশাল-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের পাশে অবস্থিত।
এই অঞ্চলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কেন্দ্রস্থল, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী এবং ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পিরোজপুরসহ পুরো বরিশাল বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত। এই এলাকা লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা দেওয়ার একটি আদর্শ স্থান।
নলছিটির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বহু প্রাচীন। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর (৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের) কাছাকাছি সময় থেকেই চীনা ব্যবসায়ীরা এখানে বাণিজ্য করতে আসতেন। আজও “চায়না বাজার”, “চায়না ফিল্ড” ও “চায়না কবর” নামক স্থানগুলোর অস্তিত্ব রয়েছে, যা শুধু ঐতিহাসিক স্মৃতিই বহন করে না বরং চীন-বাংলা মৈত্রীর ভিত্তিও তুলে ধরে।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, চীনের তাং রাজবংশের সময় এক চীনা ব্যবসায়ী এই এলাকায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয় জনগণ তাঁকে “চায়না ফিল্ড”-এর নিকটবর্তী এক কবরস্থানে দাফন করে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তা সংরক্ষণ ও সম্মানের সাথে রক্ষা করে আসছে। আজও সেই চীনা ব্যবসায়ীর কবরটি ইতিহাসের নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষিত এবং নলছিটির মানুষজন তা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখে থাকেন। এটি প্রমাণ করে যে, নলছিটির মানুষের সঙ্গে চীনা ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও প্রাচীন।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেও নলছিটি ছিল একটি সক্রিয় আন্তর্জাতিক বন্দর। চীনা ব্যবসায়ীরা এখানে এসে নারকেল, সুপারি, ডাল, সরিষা, তিল, আমলকি এবং মরিচসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের বাণিজ্য করতেন। তাঁরা “চায়না ফিল্ড”-এ এসব পণ্য শুকিয়ে কলকাতা, করাচি ও মুম্বাইয়ে পরিবহন করতেন।
অতএব, আমরা বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি যে, চীনা সরকার যেন একটি ১০০০ শয্যার “চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল” নলছিটিতে স্থাপন করেন। এটি শুধু সাধারণ জনগণের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে না, বরং চীন-বাংলাদেশ সহস্র বছরের বন্ধুত্বের প্রতীক ও ধারাবাহিকতাও হবে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এই হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি পুরো অঞ্চলবাসীর উপকারে আসবে এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বকে আরও সুদৃঢ় করবে। আমরা হাসপাতাল স্থাপনের স্থান নির্বাচন, জমির ব্যবস্থা ও স্থানীয় সমন্বয়সহ প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।
প্রায় শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে বেলা এগারোটায় ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন সমাপ্ত করা হয় মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

পাঠক প্রিয়,

আপনিও আবাসননিউজ২৪.কম-এ ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি নিয়ে লিখতে পারেন।

আপনার লেখা পাঠানোর ঠিকানাঃ [email protected]