
সোনালী ব্যাংকের অফিসার পরিচয়ে প্রতারনা,ভাঙ্গা থেকে প্রতারক চক্রের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে ব্যাংক একাউন্ট থেকে অনলাইনে ৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে পুলিশ ৪জন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কালা মৃধা ইউনিয়নের দুলকুন্ড (দোলকুন্ডি) গ্রামের মান্নান বেপারীর ছেলে মোঃ পান্নু বেপারী (২৯), উতলি (পাতরাইল দিঘিরপাড়) এলাকার কালা মিয়া মাতব্বরের ছেলে মোঃ রাজু মাতুব্বর (৩২), মোঃ সাজু মাতব্বর (২৮), মোঃ কুদ্দুস তালুকদারের ছেলে মোঃ মাসুদ তালুকদার (৩৫)। এসময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিমসহ ৪টি স্মার্টফোন, ২টি বাটন ফোন এবং ১৬টি বিভিন্ন অপারেটরের সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৪টার সময় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালা মৃধা ইউনিয়নের দুলকুন্ড (দোলকুন্ডি) গ্রামের মান্নান বেপারীর ছেলে মোঃ পান্নু বেপারীর বসতবাড়ীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শরীফ আল রাজীব বলেন, গত ১৬ এপ্রিল দুপুর ১ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর দাসপাড়া গ্রামের প্রতিভা রানী দাসকে মোবাইল নং-০১৬০৭-৩১৫৩** (আসামী সাজুর নিকট হতে উদ্ধারকৃত সিম) কয়েকবার কল আসে। কলগুলি রিসিভ করলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নিজেকে সোনালী ব্যাংকের হেড অফিস, ঢাকার কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তার সাথে কথা বলে কলটি কেটে দেয়। ওই দিনই বিকেল ৩.১০ টার সময় অপর একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি +৮৮০৯৬৩৮৮৮৯৫** নম্বর থেকে কয়েকবার কল করে। তার সোনালী ব্যাংকের একাউন্টের নমিনী সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তার নিকট থেকে তার এনআইডি ও ছবি চায় এবং তার মোবাইল নম্বরে ওটিপি আসবে বলে জানায়। ওইদিনই বিকেল ৩.৪৮ টা থেকে বিকেল ৪.২৩ টার মধ্যবর্তী সময়ে একাধিক ওটিপি মোবাইল আসে। প্রতিভা রানী দাস সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ভেবে সরল বিশ্বাসে ওটিপি কোডগুলি তাদের জানিয়ে দেয়। প্রতিভা রানী দাসের ব্যাংক একাউন্ট থেকে আট লক্ষ টাকা প্রতারকরা আত্মসাৎ করে।

তিনি বলেন, পরে এ ঘটনায় বালিয়াকান্দি থানায় গত ১৮ এপ্রিল মামলা দায়ের হয়। মামলা দায়ের হওয়ার পর পুলিশ সুপার মোছাঃ শামীমা পারভীনের তত্ত্বাবধানে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ শরীফ আল রাজীব, পিপিএম-সেবা এবং সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকারের নেতৃত্বে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনর্চাজ জামাল উদ্দিনের সার্বিক সহযোগীতায় পুলিশের চৌকশ টিমের সদস্য এসআই হিমাদ্রি হালদার, এসআই আশিকুর রহমান, এএসআই রুবেল ও রাজবাড়ী ডিবি টিমের মাধ্যমে তদন্তে নামা হয়। আসামীদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৬০৭-৩১৫৩** এর রেজিষ্ট্রেশন সংগ্রহ করে দেখা যায় যে, সিমটি ছগির মিয়ার নামে নিবন্ধিত রয়েছে এবং ০৯৬৩৮৮৮৯৫** নম্বরটি ব্রিলিয়ান্ট নাম্বার নামে পরিচিত যার মুল নম্বর ০১৯৫৯-৩৯২৩** যা বুলবুলি দাশের নামে নিবন্ধিত হলেও নাম্বারগুলো বর্তমান লোকেশন পাতরাইল দিঘিরপাড় গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা ব্যবহার করে। পরে গত ১৯ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৪টার সময় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার মোঃ পান্নু বেপারীর বসতবাড়ীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে আসামী মোঃ পান্নু বেপারী, মোঃ রাজু মাতুব্বর, তার ভাই মোঃ সাজু মাতব্বর, মোঃ মাসুদ তালুকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামীদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম নং-০১৬০৭-৩১৫৩৯৪, ০১৯৫৯-৩৯২৩৭৯ সহ ৪টি স্মার্টফোন, ২টি বাটন ফোন এবং ১৬টি বিভিন্ন অপারেটরের সিম কার্ড উদ্ধার করা করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে আসামীগণ মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে। আসামীগণ আন্তঃজেলা প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা মোবাইলে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে নিজেদেরকে ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকদের নিকট থেকে ওটিপি নিয়ে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে থাকে। আসামিদের রবিবার রাজবাড়ী আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারে পুলিশি কার্যক্রম অব্যাহত আছে।